রাতভর মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৯৫ জন সদস্য অস্ত্রসহ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে বলে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় নিশ্চিত করেছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।
এছাড়া সীমান্ত পথ ব্যবহার করে আরও কয়েক শত বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্রে।
এদিকে চলমান সংঘর্ষে তুমব্র সীমান্তের ৩ গ্রাম কোনার পাড়া, মাঝের পাড়া, বাজার পাড়া জনমানব শূন্য হয়ে পড়েছে। তারা জানায়, ঘরের কোনো জিনিসপত্র তারা নিয়ে আসতে পারেনি। থেমে থেমে গোলাগুলি অব্যাহত আছে। রাতভর তীব্র গোলাগুলির কারণে জনমনে আতঙ্কের কারণে যে যার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন বলে জানান ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, আমার ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, ভাজাবুনিয়া সীমান্ত পয়েন্টের বাসিন্দারা এখন চরম আতঙ্কে রয়েছেন। জিরো লাইনে গুলির খোসা ও মর্টারশেল পড়ে আছে।
চলমান অস্থিরতায় ঘুমধুম সীমান্তের ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন। এছাড়াও সীমান্তে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসন। তিনি জানান, সীমান্ত ঘেষা গ্রামের লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে আমাদের আশ্রয় কেন্দ্র গুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ আতঙ্কিত মানুষ তাদের নিজ নিজ আত্মীয়ের বাসায় চলে গেছে। জনসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে সোমবার সকালে তিনি বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ব হয়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছে ৩ জন বাংলাদেশি। আহতরা হলেন, কোনার পাড়ার বাসিন্দা জোতিষ্ট ধরের ছেলে প্রবীন্দ্র ধর (৫০), একই এলাকার রহিমা বেগম (৪০) নামে এক নারী এবং শামশুল আলম।
পরিস্থিতি বিবেচনায় মিয়ানমারের সঙ্গে থাকা গোটা সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি। কক্সবাজার ও বান্দরবান পুলিশকেও সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
এদিকে গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, সীমান্তে বিজিবির শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোস্টগার্ড, পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে।
বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দেরি হতে পারে। সীমান্ত দিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে সরকারি বাহিনীর কেউ আত্মরক্ষার্থে আশ্রয় চাইলে কিছু করার থাকে না।