সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে যুবক রায়হান আহমদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দীর্ঘ সাত মাস পর বুধবার দুপুরে সিলেট কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাসের কাছে পিবিআই তদন্তকারী দল হস্তান্তর করেছে। অভিযোগপত্রে পুলিশের এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ পাঁচ পুলিশ ও আকবরকে পালাতে সহায়তাকারি কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল্লা আল নোমান নামের এক যুবকসহ ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এসআই আকবরের ঘনিষ্ঠজন নোমানের বিরুদ্ধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসিটিভির হার্ডডিস্ক বদল করার অভিযোগ আনা হয়। নিহত রায়হান আহমদ (৩৩) নগরীর জালালাবাদ থানা এলাকার আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি নগরীর এক জন চিকিত্সকের অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তত্কালীন ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া, টুআইসি এসআই হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও আব্দুল্লাহ আল নোমানের মধ্যে নোমান ছাড়া সবাই কারাগারে রয়েছেন। কোর্ট ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাস বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে চলে। ফলে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হচ্ছে না।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী জানান, পিবিআইয়ের দাখিলকৃত অভিযোগপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে এবং অভিযোগপত্র নিয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এদিকে এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র ঘোষণার খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, অভিযোগপত্রে যাতে কোনোভাবেই কাউকে রক্ষা করার চেষ্টা করা না হয়, জড়িতরা যেন রক্ষা না পায়।
রায়হান হত্যা ঘটনা: আখালিয়া নিহারিপাড়ার বাসিন্দা রায়হানকে ১১ অক্টোবর রাতে সিলেটের কাষ্টঘর সুইপার কলোনি থেকে ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে যান এই ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ও তার সহকারীরা। এরপর কয়েক ঘণ্টা চলে নির্যাতন। শেষ রাতে এক পুলিশ সদস্যের মোবাইল থেকে নিজের চাচাকে ফোন করে রায়হান। এ সময় রায়হান কান্নাজড়িত কণ্ঠে দ্রুত ১০ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে আসার জন্য চাচাকে অনুরোধ করে। ১২ অক্টোবর ভোরে ফজরের নামাজের পূর্ব মুহূর্তে টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে হাজির হন চাচা। কিন্তু তখন তাকে রায়হানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এরপর সকালে আবার চাচা ফাঁড়িতে গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, অসুস্থ রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান হাসপাতালের মর্গে রায়হানের মরদেহ।
রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন ছিল: গত বছরের ১১ অক্টোবর মধ্যরাতে চাঁদা আদায়ের লক্ষ্যে কথিত ‘টর্চার সেল’ বন্দরবাজার ফাঁড়িতে বর্বরভাবে নির্যাতন চালানো হয় রায়হানের ওপর। সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের রিপোর্টে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়। তার হাতের নখ পর্যন্ত তুলে নেওয়া হয়। বর্বর নির্যাতনে মারা যান রায়হান।
অন্যদিকে মৃত্যুর পর ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা চালায় বন্দর ফাঁড়ির পুলিশ। কিন্তু রায়হানের পরিবার এমন অভিযোগ মেনে নেননি। পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও আদালতে আসামিদের স্বীকারোক্তিতে টাকার জন্য রায়হানকে ফাঁড়িতে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি উঠে আসে। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।