শনিবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ইরাক ও সিরিয়ায় মার্কিন বিমান হামলাকে উভয় দেশের ‘‘সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন’’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ‘‘সিরিয়া ও ইরাকে গত রাতের হামলা একটি হঠকারী পদক্ষেপ এবং মার্কিন সরকারের আরেকটি কৌশলগত ভুল। এতে এই অঞ্চলে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো সুফল মিলবে না।’’
সিরিয়া-ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর প্রথমবারের মতো শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল ইরান। গত সপ্তাহে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী জর্ডানের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক-সিরিয়ায় এই হামলা চালিয়েছে। প্রাণঘাতী সেই হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত এবং আরও ৪০ জনেরও বেশি সেনা আহত হয়েছিলেন। হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এর আগে ইরান-সমর্থিত বাহিনীকে দায়ী করেছিল।
পরে সৈন্যদের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন থেকে ব্যাপক বিমান হামলার নির্দেশ দেওয়া হয়। মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম) এক বিবৃতিতে বলেছে, হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অভিজাত শাখা কুদস ফোর্স এবং তাদের সংশ্লিষ্ট মিলিশিয়া গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে আমেরিকান বাহিনী ৮৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে। এই হামলায় বহু যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা দূরপাল্লার বোমারু বিমানও রয়েছে।
সেন্টকম বলেছে, ‘‘বিমান হামলায় ১২৫টিরও বেশি নির্ভুল নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ইরানি বাহিনী ও তাদের সমর্থিত মিলিশিয়াদের যারা মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলায় সহায়তা করেছিল তাদের কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার এবং গোয়েন্দা কেন্দ্রের পাশাপাশি রকেট, মিসাইল এবং ড্রোন স্টোরেজ অবকাঠামোতেও হামলা করা হয়েছে।’’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের শুক্রবারের হামলা ইরানে না হলেও গত চার মাস ধরে চলা হামাস-ইসরায়েলের যুদ্ধের মাঝে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেছেন, ‘‘গাজায় ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর অপরাধকে আড়াল করার জন্য মার্কিন হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে ইরান এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় কোনও পদক্ষেপ নেবে কি না, সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেননি তিনি।
তিনি ওই অঞ্চলে অবৈধ ও একতরফা মার্কিন হামলা প্রতিরোধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক হামলার আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছিলেন, ইরান যুদ্ধ শুরু করবে না। তবে কেউ তাদের ধমকানোর চেষ্টা করলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
কানানি বলেন, আমেরিকার সীমাহীন সমর্থনে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব আর ফিলিস্তিনিদের গণহত্যাই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সংকটের মূল কারণ।