ঘটনার তদন্তে নেমে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানতে পেরেছে এ অপহরণের মূল পরিকল্পনায় ছিলেন তারই গাড়ি চালক সামিদুল। এমনকি বিভিন্ন অপহরণ চক্রের সঙ্গে গাড়ি চালকদের যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে ডিবি লালবাগ বিভাগ।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিমেল অপহরণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) লালবাগ বিভাগ তদন্ত করছিল। তদন্তে হিমেলের ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চালকই অপহরণের মূলহোতা। সামিদুল ইসলাম যখন গাড়ি চালাতেন তখন তার ভেতরে লোভ জাগে হিমেলের মতো একটি গাড়ি কেনার। কারণ হিমেলের অনেক টাকা। তার বাবা মারা গেছেন। মায়ের একমাত্র সন্তান। হিমেলের টাকা তারও হবে এই ভাবনা থেকে অপহরণের পরিকল্পনা শুরু হয়।
সামিদুল প্রথমে তুরাগ থানা এলাকার হানিফ বাবুর্চী নামে এক সাইটের ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর পরবর্তী আলোচনা হয় ময়মনসিংহের দোবাউরা থানার ইউপি চেয়ারম্যান মামুনের সঙ্গে। তিনি একাধিকবারের চেয়ারম্যান। হিমেলকে অপহরণ করে তার বাসায় রাখার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে হিমেলকে যখন অপহরণ করে তার বাসায় নেওয়া হয় কিন্তু টাকা পেতে দেরি হওয়ায় মামুনের গাড়ি দিয়ে বর্ডার এলাকায় হিমেলকে পাঠানো হয়। গাড়িতে করে হিমেলকে বর্ডারের একটি পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সামিদুল ও মালেক, মোবারক, মানিককে নিয়ে চলে যায়। তখন থেকেই হিমেলের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। পরবর্তীতে ডিবি লালবাগ বিভাগ কাজ শুরু করে। ডিবি লালবাগ শরীয়তপুরের চর অঞ্চল থেকে মাসুদকে গ্রেপ্তার করে। মাসুদের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ময়মনসিংহের দোবাউরা, নেত্রকোণা, দূর্গাপুর এরপর তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরে সোর্স নিয়োগ করা হয়। এই সোর্সের মাধ্যমে ডিবি জানতে পারে এই গ্রুপটা শুধু অপহরণ করে না তারা চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত। তারা গরু, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।
তারা অপহরণের পর ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করত। যার ছবি ও ভিডিও হিমেলের মার কাছে পাঠানো হতো। সর্বশেষ তারা ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছিল। কিন্তু এর মধ্যে ডিবির অভিযানের কারণে তারা পেরে উঠতে পারেনি।
তিনি বলেন, এ সময়ের মধ্যে অপহরণকারীদের টাকা শেষ হয়ে যায়। এ কারণে টাকার যোগান দিতে গরু চুরি শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি নৌকা থেকে হিমেলের গাড়ি চালক সামিদুল, ১৭ মামলার আসামি মালেকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের গ্রেপ্তারের পর আমরা জানতে পারি অপহরণের মূল পরিকল্পনা করা হয় তুরাগ থানায় বসে। এরপর দোবাউরায় ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় বসে পরিকল্পনার দ্বিতীয় পর্ব ঠিক করা হয়। এই ঘটনায় মামুন ও হানিফ নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িতে চালক নিয়োগ দেওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা দেখেছি অনেক চালক অপরাধী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
গাড়ি চালকদের টার্গেট করার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হারুন বলেন, কেউ চাইলে তো কোনো ব্যক্তির তথ্য সহজে সংগ্রহ করতে পারে না। বড়লোকের সন্তান বা পরিবারের সন্তানকে অপহরণ করতে চায় তখন তারা তারা গাড়ি চালকদের ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে। হিমেলের ক্ষেত্রেও অপহরণ চক্রটি গাড়ি চালক সামিদুলকে টার্গেট করে। আর সামিদুলেরও টার্গেট ছিল বড়লোক হওয়ার। তাই তারা সহজে তাকে ব্যবহার করতে পেরেছে।