সোনাতলা উপজেলার সৈয়দ আহমেদ কলেজ এলাকায় সোনালী হাসি কমিউনিটি হসপিটাল অ্যান্ড ফাতেমা ডায়গনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওই প্রসূতিকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়।
ওই প্রসূতির নাম জাকিয়া। তিনি আদমদীঘির আলতাফনগর এলাকার নূর আলমের স্ত্রী। নূর আলম পেশায় ভ্যানচালক। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কিছুদিন পর থেকে জাকিয়া বাবার বাড়ি সোনাতলার বালুয়াহাট ইউনিয়নের দিঘলকান্দিতে অবস্থান করছিলেন।
জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি প্রসব বেদনা নিয়ে জাকিয়াকে সোনালী হাসি কমিউনিটি হসপিটাল অ্যান্ড ফাতেমা ডায়গনস্টিকে ভর্তি করা হয়। ঐ দিন বিকেলে তার সিজার অপারেশন করা হয়। সিজার অপারেশন করেন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার শরিফুল ইসলাম শাতিল। এনেসথেসিয়ার চিকিৎসক ছিলেন ডা. কামরুল আহসান। সিজারের পর এ হসপিটাল থেকে নবজাতককে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে (শজিমেক) পাঠানো হয়। শজিমেকে আসার পর চিকিৎসক ওই নবজাতককে মৃত ঘোষণা করেন।
জাকিয়ার স্বামী নূর আলম বলেন, বাচ্চা মারা যাওয়ার পর আমি বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার আলতাফনগরে যাই সন্তানকে দাফনের জন্য। আমি দিনমজুর। মোবাইল বিক্রি করে ২ হাজার টাকা হাসপাতালে দিয়েছি। ঘটনার পরের দিন ইমরান আমাকে ফোন দিয়ে বকেয়া ১৩ হাজার টাকার জন্য চাপ দেন। এই টাকা না দিলে পুলিশ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। অথচ তাদের অবহেলার কারণে আমার বাচ্চা মারা গেছে।
অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে প্রসূতির অপারেশনের দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম শাতিল বলেন, রোগীর অবস্থা খুব মারাত্মক ছিল। হাসপাতালের পক্ষ থেকে মোবাইলে খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে অপারেশন করি। অপারেশনের একদিন পরে বাচ্চা মারা গেছে বলে জানতে পারি।
ভ্যানচালক নূর আলমের স্ত্রী জাকিরা বলেন, সিজার অপারেশনের জন্য হাসপাতালে গেলে তাদের সঙ্গে প্রথমে ৮ হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি হয়। কিন্তু আমার বাচ্চা মারা যাওয়ার পর হাসপাতাল আমাদের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। এতো টাকা আমাদের কাছে নেই। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গত চার দিন ধরে আমাদের হাসপাতালে আটকে রাখা হয়েছে।
জাকিয়াকে আটকে রাখার কথা স্বীকার করেন হাসপাতালের পরিচালক দাবি করা হুমায়ন কবির ইমরান। তিনি বলেন, তাদের মোট বিল হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু তারা মাত্র ২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। এই কারণে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য এখানে রাখা হয়।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনাতলা সৈয়দ আহমেদ কলেজ এলাকার সোনালী হাসি কমিউনিটি হসপিটাল অ্যান্ড ফাতেমা ডায়াগনস্টিক নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সোনালী হাসি কমিউনিটি হাসপাতালের নিবন্ধন আছে আবদুল আলীমের নামে। আর ফাতেমা ডায়াগনস্টিকের নিবন্ধন রয়েছে ফাতেমা জিন্নাহর নামে।
জাকিয়ার বাবা মিজানুর রহমান বলেন, সোনালী হাসি কমিউনিটি হসপিটাল অ্যান্ড ফাতেমা ডায়াগনস্টিকে রাত নয়টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয় আমার মেয়েকে। সবশেষ হাসপাতালের পক্ষ থেকে রাত ৮টার দিকে আমার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এই টাকা দেওয়ারও উপায় ছিল না আমার। পরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসার পর রাত ৯টার দিকে জাকিয়াকে হাসপাতাল থেকে মুক্তি দেয়।
সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আসফার সায়মা জানান, এই বিষয়টি বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শুনেছি। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের ছেড়ে দেওয়ার কথা।