আর এ বিষয়ে আলোচনার জন্য হামাসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। হামাস যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ থামানোর জন্য হামাস একটি নতুন প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে বলে গোষ্ঠীটির রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার এবং মিসরের নির্ধারিত একটি কাঠামো নিয়ে আলোচনার জন্য হামাসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিবিসি বলছে, এই কাঠামোতে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ও করা হবে।
হানিয়াহ জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি গাজা থেকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না। যার অর্থ হচ্ছে- হামাসকে নির্মূল করা এবং হামাসের হাতে আটক সকল বন্দিকে মুক্ত করা।
গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের ফলে এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। হামাসের সেই হামলায় প্রায় ১৩০০ জন নিহত হয় এবং আরও প্রায় ২৫০ জনকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২৬ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৫ হাজার মানুষ।
ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে।
অক্টোবরে সংঘাত শুরুর পর গত নভেম্বরের শেষের দিকে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল। সেসময় ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ২৪০ ফিলিস্তিনির মুক্তির বিনিময়ে ১০৫ ইসরায়েলি ও বিদেশি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
ইসরায়েল বলেছে, ১৩৬ জন ইসরায়েলি বন্দি এখনও গাজায় হামাসের হাতে আটক রয়েছে। যদিও তাদের মধ্যে প্রায় দুই ডজন মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিবিসি বলছে, গত রোববার কাতারের প্রধানমন্ত্রী, মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক এবং মিসরের গোয়েন্দা প্রধান ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধানদের সাথে আলোচনা করেন।
তারা যুদ্ধে দ্বিতীয় দফায় বিরতির জন্য একটি সম্ভাব্য কাঠামো নিয়ে সম্মত হন। মার্কিন মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ছয় সপ্তাহের প্রাথমিক এই সংঘাত-বিরতি সময়ের মধ্যে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে অবশিষ্ট বৃদ্ধ, নারী এবং শিশু বন্দিদের মুক্তি দেবে হামাস। যদি এটি সফল হয়, তবে বন্দি বিনিময়ের আরও দুটি ধাপ সামনে আসতে পারে, যার মধ্যে পুরুষ ইসরায়েলি সৈন্যরাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত সোমবার বলেন, তিনি প্রস্তাবের বিস্তারিত বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে এটিকে ‘একটি শক্তিশালী’ কাঠামো বলে অভিহিত করেন তিনি।
এদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এই আলোচনাটিকে ‘গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছে। কিন্তু এতে ‘উল্লেখযোগ্য ফাঁক রয়েছে’ দাবি করে ‘দলগুলো এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে’ বলেও উল্লেখ করেছে তারা।
এমন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে হামাসের কাতার-ভিত্তিক রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ বলেন, তারা এই সম্ভাব্য কাঠামো নিয়ে আলোচনার জন্য কায়রোতে যাওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং গাজার ওপর আগ্রাসন বন্ধ করা এবং দখলদার বাহিনীকে ভূখণ্ড থেকে পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে জানাবেন তারা।
হানিয়াহ জোর দিয়ে বলেন, হামাস যেকোনও নতুন বাস্তব উদ্যোগ বা ধারণা নিয়ে আলোচনা করার জন্য উন্মুক্ত। যার মাধ্যমে চলমান আগ্রাসন বন্ধ হবে, আমাদের বাস্তুচ্যুত লোকদের জন্য আশ্রয় সুরক্ষিত হবে… (গাজা) পুনর্গঠন, অবরোধ তুলে নেওয়া এবং বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে ইসরায়েলের কারাগার থেকে আমাদের বন্দিদের মুক্ত করার নিশ্চয়তা থাকবে।