সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর শূন্য পদ পূরণে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্য দিয়ে। সভা শেষে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা ঘোষণা দিয়েছেন, এই বিশেষ সাধারণ সভায় কণ্ঠভোটে সাবেক সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন ফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের পক্ষে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, সভা করার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি না থাকায় বিশেষ সাধারণ সভা মুলতবি করা হয়েছে। গত ১০-১১ মার্চ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের ভোটে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু। আর রুহুল কুদ্দুস কাজল টানা দ্বিতীয়বার সম্পাদক নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে সমিতির মোট ১৪টি পদের মধ্যে আটটি পদে জয়ী হন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত ‘সাদা প্যানেল’র প্রার্থীরা। সভাপতি, সহ-সভাপতি, সহ-সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও চারজন সদস্য নির্বাচিত হন এ প্যানেল থেকে। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হন ছয়টি পদে। সম্পাদক, সহ-সভাপতি, সহ-সম্পাদক ও তিনটি সদস্য পদ পান তারা।
গত ১২ এপ্রিল নির্বাচিত কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মতিন খসরু হাসপাতালে থেকে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ এপ্রিল মারা যান। এরপর সমিতির গঠনতন্ত্রের ১৬ অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে সভাপতির শূন্যপদ পূরণের করণীয় নির্ধারণ করতে গত ২৭ এপ্রিল বিশেষ সাধারণ সভা আহ্বান করেন সম্পাদক কাজল।সে অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ২টায় সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সভা করতে গিয়ে শুরুতেই বিবাদে জড়ান কার্যনির্বাহী কমিটিতে থাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।
সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল ঘোষণা দেন যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি সভা পরিচালনা করবেন। সঙ্গে সঙ্গে ‘সাদা প্যানেল’ থেকে নির্বাচিত সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা ডায়েসে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন, তিনি সভার সভাপতিত্ব করবেন। এর বিরোধিতা করে তখন কাজল বলেন, আপনি সভাপতিত্ব করবেন সভায় এ ধরনের কোনো কার্যবিবরণী পাস হয়নি। সিনিয়র আরেকজন সহ-সভাপতি আছেন। তখন শফিক উল্ল্যা বলতে থাকেন, আমিই আজকের সভার সভাপতি। এই সভা থেকে ঘোষণা করছি, আজ থেকে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম আমিন উদ্দিন।
আওয়ামী সমর্থক আইনজীবীরা তখন করতালির মাধ্যমে তাকে সমর্থন দেন। অন্যদিকে বিএনপির আইনজীবীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ রব তোলেন। এক পর্যায়ে সমিতির সম্পাদক কাজল সভা মুলতবির ঘোষণা দেন। এরপরও মিলনায়তনে আরও ঘণ্টাখানেক দুই পক্ষের আইনজীবীদের হট্টগোল চলে। পরে বিকালে দুই পক্ষই সমিতির প্যাডে আলাদা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়। কাজলের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আহুত বিশেষ সাধারণ সভা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো আলোচনা ও সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে।
এর কিছুক্ষণের মধ্যে পাল্টা বিজ্ঞপ্তিতে সহ-সভাপতি মুহাম্মদ শফিক উল্ল্যা বলেন, তার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সমিতির সভাপতি পদে এএম আমিন উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করলে উপস্থিত সদস্যরা করতালি ও কণ্ঠভোটে তার প্রস্তাবকে সমর্থন করেন। ফলে এএম আমিন উদ্দিনকে ২০২১-২২ মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ের জন্য সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হলো। অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুনতে পেলাম আজকে বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আমাকে যদি আবারও সভাপতি নির্বাচিত করা হয়, আমি বিগত দুই বছরের মতো বারের উন্নয়নে কাজ করে যাব।