আলু, পেঁয়াজ, ডিম, রসুনসহ যাবতীয় কৃষিপণ্যের সময়ে সময়ে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা রোধে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাণিজ্য সচিব ও কৃষি সচিবকে এ কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। পাশাপাশি কৃষিপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কৃষিপণ্যের উৎপাদনস্থলে কেন বাজার ব্যবস্থাপনা করা হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনোজ কুমার ভৌমিক। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে ‘আলুর কেজি এক লাফে বাড়ল ১৫ টাকা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করেন মনোজ কুমার ভৌমিক। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, সবার ধারণা ছিল নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি সরকার সহনীয় রাখবে। দ্রব্যমূল্যের ওপর লাগাম টানবে। ডিমের দাম কমানোর মধ্য দিয়ে সে ধরনের আলামতও লক্ষ্য করা গিয়েছিল। কিন্তু সিন্ডিকেট এতো শক্তিশালী যে, ডিমের বাজারের ওপর কয়েকদিন নিয়ন্ত্রণ থাকলেও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
অন্যান্য পণ্যের দাম কমানোর বিষয়ে কোনো ধরনের উদ্যোগের কথা শোনা যায়নি। এমন এক বাস্তবতায় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরবরাহ ঠিক থাকলেও কারসাজি করে বাড়াচ্ছে সব পণ্যের দাম। গত সাত দিনের হিসাবও উলটে গেছে। হঠাৎ কেন আলু ও ডিমের দাম বাড়ল- এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
ঢাকার ক্রেতাকে প্রতি কেজি আলু কিনতে হয় ৭৫ টাকায়। ১ সপ্তাহ আগে ছিল ৬০-৬৫ টাকা। ঢাকার বাইরেও প্রায় একই চিত্র। অন্যদিকে সরবরাহ ঠিক থাকলেও হালি প্রতি (৪ পিস) ডিমের দাম বেড়েছে ৩-৫ টাকা। পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজ বাজারে এলেও ভারত রপ্তানি বন্ধের অজুহাতে পণ্যটি এখনও উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের প্রতারণার যেন আর শেষ নেই।
কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. শাকিল বলেন, ‘বাজারে ফের আলু, ডিমের দাম বাড়ছে। যারা বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখবে তাদের ভূমিকা পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে ফের বাড়তি দামে এই দুই পণ্য কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারে নতুন পেঁয়াজ এলেও এখনো বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকায়। দেখারও যেন কেউ নেই।’
এদিকে পর্যাপ্ত মজুতের পরও দেশে হিমাগার মালিকদের কারসাজিতে গত বছরের জুন থেকেই অস্থির আলুর বাজার। সে সময় প্রতিকেজি আলু খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। পরে তদারকি জোরদার করলে কেজি ৩৫ টাকায় নেমে আসে। তবে তদারকি শিথিল করা হলে আগস্ট শেষে ফের বাড়তে থাকে দাম।
আগস্টের শুরুতে কেজি ৪০ টাকা বিক্রি হলেও শেষে ৫০ টাকা বিক্রি হয়। সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৬৫ টাকায় বিক্রি হলে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিকেজি খুচরা মূল্য ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তারপরও দাম না কমলে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট না ভাঙতে পেরে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। আমদানি করা আলু দেশে এলেও দাম কমে না। এছাড়া নতুন আলু বাজারে এলেও এখনও বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৭৫ টাকা।