এই পরিস্থিতিতে হুথিদের হামলা বন্ধে ইরানের প্রতি আহ্বান জানাতে চীনের দ্বারস্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এ কাজে বেইজিংয়ের কাছ থেকে খুব বেশি সাড়া পায়নি ওয়াশিংটন।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের বরাত দিয়ে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলাকারী ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের লাগাম টেনে ধরতে তেহরানের প্রতি আহ্বান জানাতে চীনকে অনুরোধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এ কাজে বেইজিংয়ের কাছ থেকে সাহায্যের সামান্য লক্ষণই দেখতে পাওয়া গেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বুধবার ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এই খবর সামনে এনেছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন মাসে চীনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে বারবার হুথিদের হামলা ও এ বিষয়ে ইরানকে আহ্বান জানানোর বিষয়টি উত্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এবং তার ডেপুটি জন ফিনার চলতি মাসে ওয়াশিংটনে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিভাগের প্রধান লিউ জিয়ানচাওয়ের সাথে বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে পত্রিকাটি বলেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনও চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, চীন গত সপ্তাহে একটি ছোটখাট বিবৃতি জারি করা ছাড়া হুথিদের নিয়ন্ত্রণে ইরানের ওপর কোনও চাপ দিয়েছে বলে প্রমাণ নেই।
এর আগে বুধবার মার্কিন সামরিক বাহিনী ইয়েমেনে আবারও হামলা চালায়। সর্বশেষ এই হামলায় মার্কিন বাহিনী হুথিদের দুটি জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র লোহিত সাগরকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
এর আগে গত সোমবার গভীর রাতে ইয়েমেনে হুথিদের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে নতুন করে যৌথ বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন পরে জানায়, হুথি গোষ্ঠীর ওপর সোমবারের এই হামলায় আটটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি ভূগর্ভস্থ স্টোরেজ সাইট এবং হুথি ক্ষেপণাস্ত্র ও নজরদারি সক্ষমতাও রয়েছে।
ইয়েমেনে হুথিদের লক্ষ্যবস্তুতে এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম হামলা। আর গত ১১ জানুয়ারি যৌথ হামলা চালানোর পর এটি ছিল যুক্তরাজ্যের সাথে দ্বিতীয় যৌথ অভিযান। অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা এবং নেদারল্যান্ডসের সমর্থনে এই হামলা চালানো হয় বলেও জানায় পেন্টাগন।
মার্কিন বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আইজেনহাওয়ারের যুদ্ধবিমানগুলো সোমবারের হামলায় যুক্ত ছিল। অন্যদিকে চারটি আরএএফ টাইফুন যুদ্ধবিমান সোমবারের হামলায় অংশ নেয় বলে যুক্তরাজ্য জানায়।
মূলত ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গত প্রায় তিন মাস ধরে লোহিত সাগরে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট ও ইসরায়েলগামী জাহাজে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে আসছে হুথি বিদ্রোহীরা। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র এই গোষ্ঠী জানিয়েছে, যতদিন গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলবে ততদিন তারা হামলা চালিয়ে যাবে।
এর মাঝেই হুথিদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হুথিরা মূলত ইয়েমেনের শিয়া মুসলিম সংখ্যালঘু জাইদি নামের উপ-সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। বেশিরভাগ ইয়েমেনি হুথিদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বসবাস করে। পাশাপাশি সানা এবং ইয়েমেনের উত্তরে হুথিরা লোহিত সাগরের উপকূলরেখাও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এদিকে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হুথিদের এসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এর অনেক প্রভাব পড়েছে। লোহিত সাগর থেকে মিসরের সুয়েজ খাল হয়ে যেসব জাহাজ ইউরোপে যেত; সেসব জাহাজকে এখন আফ্রিকা ঘুরে যেতে হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, হুথিদের হামলা বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচল ব্যাহত করেছে এবং বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা জাগিয়েছে। ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের ফলে মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হতে পারে বলেও উদ্বেগ রয়েছে।