দেশের মধ্যে তীব্র ডলার সংকট রয়েছে। এ সংকট বেশ পুরোনো। মার্কিন এ মুদ্রাটির খোলা বাজার পরিস্থিতিও টালমাটাল। মূলত সংকট শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে। বাধাগ্রস্ত হয় ঋণপত্র (এলসি) খোলায়। এখনো অনেক ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছে না, নিষ্পত্তিতে ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। তবে বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ করে জরুরি পণ্য আমদানিতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে প্রতি মাসেই ডলার চলে যাওয়ায়, কমছে রিজার্ভের পরিমাণও।
অন্যদিকে, ডলার সংকটের নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। আমদানিতে লাগাম টানা হয়েছে। ডলার সংগ্রহেও কৌশলী অবস্থান হিসেবে ডলারের কৃত্রিম দরপতন করা হচ্ছে। সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া এসব পদক্ষেপে সুফল মিলছে। আমদানি ব্যয় কমে আসার পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতিও কমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম ৫ মাসে পণ্য আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫৭২ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ে দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলারের। এতে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৪৭৬ কোটি ডলারের। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি এক ডলার ১০৯ টাকা ধরে) এর পরিমাণ ৫১ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। আর গত বছরের একই সময়ে (২০২২-২৩ সালের জুলাই-নভেম্বর) বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৮২ কোটি ডলার। অর্থাৎ সে হিসাবে বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে প্রায় ৬০ শতাংশ (৫৯ দশমিক ৭২ শতাংশ)।
আর চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে ঋণ করতে হচ্ছে না। তবে, ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে চলতি হিসাবে কোন ঘাটতি তৈরি হয়নি। সূচকটি উল্টো ইতিবাচক ধারায় এসেছে। এ সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ৫৮ কোটি টাকা। যা আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাব ঘাটতিতে ছিল। সেক্ষেত্রে বলা যায়, বছরের শুরুতে চলতি হিসাবে এখন ইতিবাচক ধারা রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-নভেম্বর) ঘাটতি ছিল ৫৬৭ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের পাঁচ সময়ে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ৮৮১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৮৭৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। তথ্য বলছে, গতবছরের একই সময়ের চেয়ে রেমিট্যান্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ।
তবে অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশ যেখানে ২১৬ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল। সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে তা কমে ১৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসের চেয়ে চলতি বছরের পাঁচ মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।
দেশে বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অর্থকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত পাঁচ মাস সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যেটা আগের অর্থবছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সে হিসাবে এ সূচকটি আগের বছরের চেয়ে ১০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ কমেছে।
আলোচিত সময়ে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত দেখা গেছে। প্রথম পাঁচ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার চলে গেছে। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) এক কোটি ৬০ লাখ ডলার।