সরকারের পদত্যাগের একদফা এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর এবং পরদিন ১ জানুয়ারি (২০২৪) আবারও গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কটের পর এখন ভোটারদের কেন্দ্রবিমুখ করাই মূল লক্ষ্য বিএনপির। সাধারণ মানুষকে ভোটে নিরুৎসাহিত করতে সবধরনের চেষ্টা করবে দলটি। ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে সারাদেশে এক কোটির বেশি লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভার্চুয়াল মাধ্যমেও নানা কৌশলে ভোট বর্জনের প্রচার অব্যাহত রয়েছে। জনসংযোগের নানামুখী পদক্ষেপের পাশাপাশি দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলনও অব্যাহত রাখা হবে।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসাবে ভোট গ্রহণের আর বাকি মাত্র আট দিন। বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করেছে। সেইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে ভোটদানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে দলগুলো।
এরই মধ্যে ভোট বর্জন এবং অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে সারা দেশে লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ করছে বিএনপি। গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি আজ শনিবার শেষ হচ্ছে।
‘প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানকে নিয়ে জিঘাংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের একদফার আন্দোলন এখন বেশি ত্বরান্বিত হচ্ছে। প্রতিটি জনগণ আমাদের কর্মসূচিতে সমর্থন দিচ্ছে। নেতাকর্মীরা হাটে-মাঠে, খেতে-খামারে বাজারে-শপিংমলে জনগণকে আমরা লিফলেট দিয়েছি। তারা আমাদের কথা শুনেছেন এবং সমর্থন দিচ্ছেন। কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে সরকার ২০১৩-১৪-১৫ সালে যেভাবে ষড়যন্ত্র করেছে সেটাই আবারও করছে। পুলিশ হয়রানি করছে, গ্রেফতার ও মামলা দিচ্ছে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শুধু একজন ব্যক্তির সর্বময় ক্ষমতাধর হওয়ার ইচ্ছার কারণে আজ সারাদেশকে নৈরাজ্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে সরকার। অথচ একাত্তর সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির চেতনা। কিন্তু আজকে দেশের মানুষ আতঙ্কের মাঝে দিন পার করছে। দেশে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছে এবং নারকীয় প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। চারদিকে পুলিশ-র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রাজত্ব চলছে। বাড়ি থেকে লোকজনকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। নারীদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করছে। গ্রেফতার করলেও কোনো তথ্য দিচ্ছে না।’
রিজভী বলেন, ‘গণতন্ত্রে বিরোধী দল স্বীকৃত সত্য। কিন্তু সরকার সেটাকে মানতে চান না। যাতে তাদের ক্ষমতার মধুর হাড়ি উল্টে না যায়। সেজন্যই শেখ হাসিনার ফ্যাসিজমকে পাহারা দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলটির নেতাকর্মীরা বিএনপিকে নির্মূলের হুংকার দিচ্ছেন। কিন্তু বিএনপি জনপ্রিয় কি না সেটা তো সুষ্ঠু নির্বাচনেই প্রমাণিত হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনা জনগণকে আতঙ্কের মধ্যে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছেন। তিনি তো জনগণের ওপর তার সাজানো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে সীমাহীন দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে নীলনকশার বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশকে নিয়ে গভীর ও ভয়ানক চক্রান্ত চলছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর হিংসার মাত্রা বেড়েই চলছে। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে জিঘাংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। যা মিথ্যা এবং কাল্পনিক। তিনি রাজনীতির নীতি নৈতিকতাকে মানছেন না। তারেক রহমান ও জিয়া পরিবারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের বক্তব্য দেন তা মিথ্যা ও কটূক্তিমূলক। কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য দিলে সে দেশের জনগণের শালীনতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। আমি তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এছাড়াও সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোট বর্জনে লিফলেট বিতরণকালে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানান রিজভী। বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় ১৫০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, ছয়টি মামলায় ৪২৯ জনের বেশি আসামি করা হয়েছে।’