যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির পার্লামেন্ট কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে ইসরায়েলের জন্য ১৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার মূল্যের সমরাস্ত্র সহায়তা বরাদ্দ করেছেন। গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বাঁধার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এমন পদক্ষেপ নিলো বাইডেন প্রশাসন।
শুক্রবার কংগ্রেসের অধিবেশনে এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর ইসরায়েলের জন্য ট্যাংকে ব্যবহারযোগ্য ১৪ হাজার গোলা বরাদ্দ দিয়েছিলেন বাইডেন। এসব গোলার সম্মিলিত মূল্য ছিল ১০ কোটি ৬০ লাখ ডলারেরও বেশি।
সর্বশেষ বরাদ্দের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে শুক্রবারের কংগ্রেস অধিবেশনে ব্লিনকেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই মুহূর্তে এই সহায়তা জরুরি ছিল। যদি কংগ্রেসের পর্যালোচনা ও অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হতো, তাহলে অনেক বিলম্ব হতো এবং সেক্ষেত্রে সংকটে পড়ত ইসরায়েল।
‘জরুরি সহায়তা’ ক্যাটাগরিতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে অধিবেশনে জানিয়েছেন ব্লিনকেন।
প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট যদি কোনো দেশকে অর্থ বা সামরিক সহায়তা প্রদান করতে চান, সেক্ষেত্রে প্রথমে প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে কংগ্রেসে লিখিত আকারে সেই প্রস্তাবনা পাঠাতে হয়। কংগ্রেসের আইনপ্রণেতারা সেই প্রস্তাবনা পর্যালোচনা ও যাচাই শেষে তাতে সম্মতি অথবা আপত্তি জানান। যদি আইনপ্রণেতারা আপত্তি জানান, তাহলে ওই প্রস্তাবনা বাতিল হয়ে যায়।
এর আগে ২০১৯ সালে বাইডেনের পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জর্ডানের জন্য ৮১০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা বরাদ্দ করা হয়েছিল। সেই বরাদ্দের বরাদ্দের জন্য ব্যাপক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে।
বস্তুত, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ১৯৭৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র চার বার কংগ্রেসের মতামত না নিয়ে বাইরের দেশে সমরাস্ত্র সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে। তার মধ্যে বাইডেন প্রশাসনই এই পদক্ষেপ নিলো ২ বার।
প্রসঙ্গত, ত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে হামাস যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু,অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন।
সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫৪ হাজার ৯৬৮ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৭ হাজার জন।। এছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।
অন্যদিকে, হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। পাশাপাশি, ইসরায়েলের ভূখণ্ড থেকে ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের সেদিন জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা, তাদের মধ্যে এখনও মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন শতাধিক জিম্মি।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার আগ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি অভিযান চলবে। অন্যদিকে হামাসের হাইকমান্ড জানিয়েছে, তারা দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।