গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির উঠানে নৌকার পোস্টার টানানো দেখে ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারণায় অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করাসহ পরিবারের সদস্যদের মারধরেরও অভিযোগ রয়েছে।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজসহ তিনজন নামীয় ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪ থেকে ৫ জনের বিরুদ্ধে ফুলছড়ি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী বাবলু মিয়ার পরিবার।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ওই আসনের স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ) ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলীর সমর্থক।
অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন- উপজেলার দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের মৃত মেছের উদ্দিনের ছেলে লিটন মিয়া (৪২)। তিনি গত ১ নভেম্বর উপজেলার খবিরিয়া আলিম মাদরাসার মাঠ থেকে ককটেল ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার মামলার কারাভুক্ত আসামি। এছাড়া অপরজন একই এলাকার আনছার আলীর ছেলে আলামিন ইসলাম বাবু।
ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে ভুক্তভোগী বাবলু মিয়ার দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থক। বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা গাইবান্ধা-৫ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের সমর্থক তারা। নির্বাচনে তার পরিবারসহ সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করছে। প্রচারণার অংশ হিসেবে বাবলু বাড়ির উঠানে নৌকার পোস্টার টানায়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে জিএম সেলিম পারভেজ বাবলুকে ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ) ট্রাক প্রতীকের ফারজানা রাব্বী বুবলীর প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে বলেন। এতে রাজি না হওয়ায় সভাপতি সেলিম পারভেজ তার বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করবে বলে হুমকি দেন।
অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, ‘যদি নৌকা বাদ দিয়ে ট্রাকের পক্ষে না আসিস তাহলে তোদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দেব, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান। তোদের তেল বেশি হয়েছে’ বলে হুমকি দেন সেলিম পারভেজ।
এছাড়া গত ২১ ডিসেম্বর বিকেলে ফুলছড়ির বালাশীঘাটের নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি অভিযুক্ত লিটন মিয়া ও আলামিন ইসলাম বাবুসহ অজ্ঞাত কয়েকজন ওই বাড়িতে প্রবেশ করে বাবলু মিয়াকে না পেয়ে বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় বাবলুর মা (বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী) বেবি বেওয়াকে (৬৫) মারধর করে শ্লীলতাহানী ঘটানোর চেষ্টা করেন তারা।
পরে একইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে অভিযুক্তরা দ্বিতীয় দফায় আবারও বাবলুর বসতবাড়ি সংলগ্ন জমিতে তাকে একা পেয়ে মারধর করে। চিৎকার শুনে তার স্ত্রী বাঁচাতে গেলে তাকেও মারধর করে শ্লীলতাহানী করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
শুধু তাই নয় অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এসময় বাবলুর ছেলের মোবাইলে ‘জিতবে এবার নৌকা’ গান শুনতে পেয়ে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা বাড়ির গেট ভেঙে প্রবেশ করে তাদের রান্না করা খাবার লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে নষ্ট করে দেয়। নৌকার প্রচার-প্রচারণা অংশ না নিতেও হুমকে দেন লিটন। তিনিও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করার হুমকি দেন।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বেবি বেওয়া বলেন, লিটন নেশা করে এসে আমাকে গালিগালাজ, মারধর করেছে। আমাদেরকে রাব্বীর বেটির (বুবলী) মিটিংয়ে ডাকে। যাই না জন্য এই বয়সে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়েও মার খেতে হচ্ছে। ভাতা বন্ধ করে দিলে কী খাব? আমি এর বিচার চাই।
অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাবলু মিয়া বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। সব সময়ই নৌকায় ভোট দিয়েছি। আমরা নৌকার খাই। কিন্তু তারা (অভিযুক্তরা) স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিটিংয়ে আমাদেরকে যেতে বলে। নৌকায় ভোট দিলে সেলিম পারভেজ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দিতে চেয়েছে। আমার বাড়িতে এসে লিটন নৌকার পোস্টার আগুনে পুড়িয়েছে। লিটন, বাবুসহ অন্যরাও আমাদেরকে মারধর করেছে। লিটনও ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। এছাড়া মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়েও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ দায়ের হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফুলছড়ি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিফুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।