পেঁয়াজ, আলু, রসুনের পাশাপাশি ভালো নেই মাছ, মুরগি ও মাংসের বাজারও। গত সপ্তাহে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া গরুর মাংস কেজি প্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। মুরগি ও বিভিন্ন প্রকার মাছের দামও বেড়েছে। এতে একদিকে যেমন ক্রেতারা অসহায় আত্মসমর্পণ করছেন অপরদিকে প্রতিদিনকার খাবার তালিকা থেকেও পুষ্টি বঞ্চিত হচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। মূল্যবৃদ্ধির এই জালে অনেক পরিবার সুষম ও পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ কমিয়ে এনেছেন। খরচ বাঁচাতে নিয়েছেন নানা কৌশল।
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাসাবো মাদারটেক বাজার ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র দেখা যায়।
গত সপ্তাহে ঢাকার এ অঞ্চলটিতে ৫৯৫ টাকা দরে গরুর মাংস বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কেজি প্রতি ৫৫ টাকা বেড়ে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর স্বপ্নসহ অন্যান্য সুপারশপগুলোতে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৯৯ টাকায়। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া লেয়ার মুরগি কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা কেজি দরে সোনালি মুরগি বিক্রি হলে এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বড় সাইজের রুই মাছ কেজিপ্রতি ৪০০ থেকে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি সাইজের রুইয়ের কেজি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা এবং ছোট সাইজের রুই মাছ কেজিপ্রতি ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট রুই মাছ গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে বড় সাইজের রুই মাছের দাম। অপরিবর্তিত দামে বিক্রি হচ্ছে চিড়িংও।
এ ছাড়া গত সপ্তাহে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া মাঝারি সাইজের চিংড়ি এ সপ্তাহেও ৬০০ টাকা কেজিতে মিলছে। তবে কেজিপ্রতি ১০০ টাকা কমে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে মাঝারি সাইজের ইলিশ। বড় সাইজের পাংগাস ১৮০ ও ছোট সাইজের পাংগাস ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে সিলভার কার্প, কাতল, তেলাপিয়া ও সরপুঁটির দাম।
বড় সিলভার কার্প প্রতি কেজি ২৬০ টাকা, বড় সাইজের কাতল মাছ ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা এবং বড় সরপুঁটি ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নূর আলম। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় পরিবারের জন্য বাজার করতে এসেছেন।
এ ক্রেতা বলেন, মানুষের জীবনযাত্রায় একটা বড় পরিবর্তন আসছে। তবে সেটি যত ইতিবাচক তার চেয়ে বেশি নেতিবাচক। গত দুই বছরে আমার প্রতিষ্ঠান আমার বেতন বাড়ায়নি অথচ এই দুই বছরে বাজারে পণ্যের দাম কিন্তু বসে নেই। মাছ, মাংস, সবজি, আলু, পেঁয়াজ কিছুতেই হাত দেওয়া যায় না। বাজারের কথা শুনতেই মনে একটা ভয় কাজ করে।
নূর আলম বলেন, উপায় না পেয়ে অনেক নীতি অবলম্বন করতে হচ্ছে। আগে মাসে ৪ কেজি পেঁয়াজ লাগলেও এখন দুই কেজিতে মাস পার করতে বলছি। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার গরুর মাংস খেলেও এখন মাসে এক দুইবার খাই। একই অবস্থা বাকিসব ক্ষেত্রেও।
আর কত সংযত হলে দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙবে, বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ ক্রেতা।
বাজার করতে আসা রফিক মৃধা বলেন, কিছু বলেই কিছু হয় না। যা হওয়ার তা হবেই। যে যেভাবে পারছে মেরে খাচ্ছে। দেশটা এমন অবস্থায় গিয়েছে যে দেখার কেউ নেই। আজ ১০ টাকা কমলে কাল ১০০ টাকা বেড়ে যায়। কি এক আজব নিয়ম! এখানে নিয়ন্ত্রণহীন পাগলা ঘোড়ার মতো চলে সব।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে মুরগি বিক্রেতা জয় বলেন, আমরা যেমন দামে কিনি তার চেয়ে কিছু বেশি দামে বিক্রি করি। ২৬০ টাকায় পাইকারি মুরগি কিনলে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। মুরগি আনতে একটা খরচ, দোকান খরচ, স্টাফ খরচ, নিজের মজুরি, এরপর লাভের চিন্তা করতে হয়। তবে পাইকারি বাজারে আরেকটু কম দামে মুরগি পেলে আমরাও কমাতে পারতাম। দাম কমানোর চাবিতো পাইকারদের হাতে। আমরা তো খুচরা ব্যবসায়ী।
মাংস বিক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন, আমরা ৬০০ টাকার মাংস এ সপ্তাহে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করছি। আগামী সপ্তাহে ৭০০ বা ৭৫০ বিক্রি করতে হবে। কিছুই করার নেই। একটি গরু কিনে কাটলে তার খরচ কেজিপ্রতি ৭০০ করেই দাঁড়ায়। আমার এখানে পাঁচজন স্টাফ আছে তাদের বেতন প্রতিদিন এক হাজার করে পাঁচ হাজার গুণতে হয়। এতো লস দিয়ে তো আর ব্যবসা হয় না। এক খলিল ৫৯৫ টাকা বিক্রি করতে পারলেও আমরা পারব না। তিনি প্রতিদিন ১০টা গরু কাটলেও আমরা কাটি একটা বা দুইটা। এভাবে তো আর পুষবে না।
তিনি বলেন, এখনো লসে গরু কাটছি। আগামী সপ্তাহে বেশি দামে বিক্রি করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে তো গরুর দাম কমে নাই। গরুর খাবারে এ দাম কমে নাই। ভুসি, খৈল, কুড়ার দাম তো নিয়ন্ত্রণে নাই। তা হলে মাংসের দাম কীভাবে কমবে, সে প্রশ্নও রাখেন জলিল।
মাছ ব্যবসায়ী মিজান বলেন, মাছের বাজারে খুব একটা বড় পরিবর্তন নাই। কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা আপডাউন হতেই পারে। প্রতিদিন এমন হবে। মাছের সাইজ এবং মানভেদে পরিবর্তন হয় সবসময়।