নতুন ঋণ বিতরণ করলে তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) তথ্য পাঠানোর নির্দেশ জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ নবায়ন অথবা পুনঃতফসিল করলে সেই তথ্য দ্রুত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো সিআইবি বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক নির্দেশনায় এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এক টাকা বা তার বেশি বকেয়া স্থিতিসম্পন্ন ঋণতথ্য পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সিআইবি অনলাইন সিস্টেমে আপলোড করতে হবে। সিআইবি ডাটাবেইজে সংরক্ষিত ঋণতথ্যের মান অধিকতর নির্ভরযোগ্য করাসহ দ্রুতসময়ে গ্রাহকদের হালনাগাদ রিপোর্ট প্রাপ্তির লক্ষ্যে নতুন উন্নয়ন সিআইএস সফটওয়্যারে আপলোড দিতে হবে। আপলোডের সময়সীমা কোনক্রমেই ১৫ (পনের) তারিখ অতিক্রম করা যাবে না।
ঋণ নবায়ন, বর্ধিতকরণ, পুনর্গঠন, পুনঃতফসিল ও সমন্বয় কিংবা অন্য কোন কারণে কোন ঋণের শ্রেণিমানে কোনরূপ পরিবর্তন হলে যে তারিখে ঋণতথ্যের পরিবর্তন হয়েছে সেই তারিখ ভিত্তিক তথ্য তাৎক্ষনিকভাবে সফটওয়্যারে স্থাপন করতে হবে। নির্দেশনাটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে নির্দেশনায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০ আসনের বিপরীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে এসব প্রার্থীদের সিআইবি তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাচাই-বাছাইয়ে ১১৮ জন প্রার্থী ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। পরে এ তথ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আইন অনুযায়ী— ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। তাই মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি থাকলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। এ কারণে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকেন। এ ছাড়া আপিলের শুনানির সময় নির্বাচন কমিশনেও ঋণখেলাপি প্রার্থীদের ঠেকাতে ব্যাংক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী— প্রার্থীদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে তা মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে নবায়ন বা পরিশোধ করতে হয়। আর যথাসময়ে ঋণ নবায়ন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারেন। অন্যথায় প্রার্থী হতে পারবেন না।
এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন, তাদের খেলাপি ঋণের তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি)। এফআইডির থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশ দেওয়ার পর দেশের সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে এ নির্দেশনা পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এতে বলা হয়, প্রার্থীদের ঋণখেলাপি সম্পর্কিত তথ্য নির্ভুলভাবে দেওয়ার দায়িত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের। ভুল তথ্য দিলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত থেকে প্রার্থীদের খেলাপি ঋণের তথ্য মিলিয়ে দেখবেন এবং কোনো ঋণখেলাপি প্রার্থী হয়েছেন কি না। তবে যেসব প্রার্থী নিজস্ব নির্বাচনী এলাকার পরিবর্তে অন্যত্র ব্যাংক হিসাব বা ঋণ হিসাব পরিচালনা করে আসছেন, তাদের তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের এমডিরা বিশেষ দূতের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন এবং বিশেষ দূত বা ফ্যাক্স বা ই–মেইলের মাধ্যমে এ তথ্য নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক (সিআইবি) ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠান।
জাতীয় নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে ১৯৯১ সালে প্রথম খেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।