ফরিদপুরের সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে ‘মোনাফেক’ আখ্যায়িত করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরের দিন (৮ জানুয়ারি) জুতার মালা পরিয়ে ঘোরাতে চেয়েছেন ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী। শাহদাব আকবর প্রয়াত সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সালথার বল্লভদী ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া বাজারের পাশে একটি বাড়িতে নির্বাচনী সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জামাল হোসেন মিয়ার সমর্থক।
শাহদাব আকবর বলেন, ‘আমরা আজকে এখানে দেখি, অনেক মীর জাফর। আমার বলতেও কষ্ট হয়, আপনাদের এই উপজেলার সভাপতি দেলোয়ার সাহেব, যিনি দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন; আওয়ামী লীগ করে এই সময়ে এসে তিনিও মোনাফেকি করলেন। তিনি কিন্তু ১৯৮৬ সালে যখন জাতীয় পার্টির ভোট কাটছিলেন, তখন আমি সালথা থেকে দৌড়ায় এসে তাকে দাবড়ায়ে ধানখেতে উঠায়ছিলাম। আর সেই লোকটারে আমার মা (সাজেদা চৌধুরী) দুধকলা দিয়ে পুষেছিলেন। তিনি আজকে জায়গামতো চলে গেলেন।’
দেলোয়ার হোসেন সালথা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেলেও শাহদাব আকবরের বিরোধীতার মুখে পড়েন তিনি। ওই নির্বাচনে শাহদাবের সমর্থক বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ওয়াদুদ মিয়া নির্বাচিত হন।
শাহদাব আকবর বলেন, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তাকে (দেলোয়ার হোসেন) সমর্থন না দেওয়ায় আমাকে উপর মহলের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে। সেখানে আমি ঠিকমতো বোঝাতে পেরেছি বলেই আমাকে নৌকা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে তিনি (দেলোয়ার হোসেন) এদিক-ওদিক অনেক রকম কথা বলেন। ইনশাআল্লাহ একটা জুতার মালা বানাইতে দিছি। ৮ তারিখ ওনার গলায় জুতার মালা দিয়া ঘোরানো হবে। বেইমানদের আপনারা চিনে রাখেন।’
সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর বলেন, ‘আজকে আমি আওয়ামী লীগ সরকারের, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতীক নিয়ে এসেছি, সেখানে এদিক-ওদিক অনেক বড় বড় নেতারা ডান-বাম করেন, যারা সারা জীবন দেখা গেছে নৌকার কথা বলেছে, এরা মোনাফেক। এরা মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রীর আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার কথা বলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে, শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এই মোনাফেকদের বিচার ইনশাআল্লাহ এই নগরকান্দা-সালথার মাটিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা কিন্তু প্রকৃত মানুষগুলোকে খুঁজে পাব, যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, যারা টিআর-কাবিখার জন্য দৌড়ায় না। যারা সারা জীবন নিজের জমিজায়গা বিক্রি করে এই আওয়ামী লীগ করেছে। তাদের আমি বিশ্বাস করি, টাকাপয়সা দিয়ে কেনা যাবে না। আর যদি তাদের টাকাপয়সা দিয়ে কিনতে পারত, তাহলে এই বাংলাদেশে যারা চোরাকারবারি করে, তারাই সব সংসদ সদস্য হয়ে যেত। তারা কিন্তু সেটা পারে নাই। কারণ, জনগণ কোনো দিন সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না।’
শাহদাব আকবর বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তার সবেচেয়ে ঘনিষ্ঠ লোকজন, সহচর, তারা কিন্তু তার রক্তের ওপর দিয়ে গিয়ে খুনি মোশতাকের দলে, মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল। বেইমানি করেছিল। সাজেদা চৌধুরীর রক্তে কোনো বেইমানি নেই। তার সন্তান আমি, আমার শরীরেও কোনো বেইমানি নেই। তখন সাজেদা চৌধুরী এই দলকে সংগঠিত করেছিলেন। ২১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই আপনারা তৃণমূলের যারা নেতা-কর্মীরা আছেন, জনগণ আছেন, আপনারা ছিলেন বলেই আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলাম। ২০০৭ সালে আবার দেখেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর অনেক বড় বড় নেতা চলে গেল। প্রধানমন্ত্রীকে মাইনাস করবে বলে। কিন্তু কামিয়াব হয় নাই। জনগণ বিপুল ভোটে তাকে জয়ী করেছেন।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শাহদাব আকবর আওয়ামী লীগের মনোনীত একজন প্রার্থী হয়ে আমাকে এসব কথা বলতে পারেন না। বিষয়টি আমি শুনেছি। এ বিষয়ে আমি নির্বাচন কমিশনে জানাব।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর-২ আসনে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহদাব আকবর ছাড়াও নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেন মিয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। অন্য দুই প্রার্থী হলেন- খেলাফত আন্দোলনের মো. জয়নাল আবেদীন বকুল মিয়া এবং জাকের পার্টির মো. ফজলুর হক।