বিআরডিবির পল্লি জীবিকায়ন ‘দারিদ্র্য হ্রাস’ প্রকল্প কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঋণ দেওয়ার কথা বলে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘুষ না দেওয়ায় কেউ ঋণই পাচ্ছেন না, আবার ঘুষ দিয়ে একই সংস্থার দুই প্রকল্প থেকে ঋণ পাচ্ছেন কেউ। এমন ঘটনা ঘটেছে ফুলবাড়িয়া উপজেলায়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রুরাল ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিআরডিবি) অধীনে ফুলবাড়িয়ায় পল্লি জীবিকায়ন প্রকল্প-৩ চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় পুটিজানা ইউনিয়নের ২৮ সদস্যের গাড়াজান পুরুষ উন্নয়ন দল গঠন করা হয় ২০২২ সালে। প্রথম অবস্থায় প্রত্যেক গ্রাহককে ৩০ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ঋণ বিতরণের ছয় মাস যেতে না যেতে ঘুষ আদায়ের ফন্দি আঁটেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন। গ্রাহকদের বেশি টাকা ঋণ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বরাদ্দের পুরো টাকা ও জামানত বাবদ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা আদায় করেন তিনি। প্রকল্প কর্মকর্তা আগের ঋণের টাকা আদায় করে প্রায় ছয় মাস ধরে সদস্যদের সঙ্গে টালবাহানা করছেন। ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার ঋণ আর দিচ্ছেন না। প্রকল্প কর্মকর্তা ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে একাধিক সদস্যকে ঋণ দিয়েছেন।
সদস্যরা অভিযোগ করেন, কর্মকর্তার এমন আদেশের ফলে সদস্যরা প্রত্যেকের নামে ব্যাংকে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলেন। আজ-কাল করে ঋণ দেবে বলে সদস্যদের হয়রানি করছে প্রকল্প অফিস।
ঋণ না পাওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘লাখ টাকা ঋণ পাওয়ার আশায় কেউ ২৫ থেকে ৩০ হাজার, আবার কেউ তারও বেশি টাকা ধারদেনা করে পুরোনো ঋণ পরিশোধ করছেন। সদস্যরা নতুন ফরম পূরণ ও প্রকল্পের প্রয়োজনীয় কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিতে যান। কিন্তু প্রকল্প কর্মকর্তা জানিয়ে দেন, ১ লাখ টাকার ওপরে ঋণ নিতে গেলে স্বাক্ষর করে সাদা চেক বইয়ের পাতা জমা দিতে হবে। এ অবস্থায় গ্রাহকরা বেকায়দায় পড়েছেন।’
গাড়াজান পুরুষ উন্নয়ন দলের সভাপতি কামরুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমি সবার ঋণ ফরমে স্বাক্ষর করে দিয়েছি; কিন্তু ঋণ পেল তিনজন। এটি সদস্যদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। একই সংস্থার দুই প্রকল্প থেকে আমার দলের সদস্য আল আমিন একই নামে দুটি ঋণ পান কীভাবে?’
আব্দুল জব্বার নামে এক সদস্য বলেন, ‘আমার ঋণ পেতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ করেছি। তাই আমি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ পেয়েছি, তোমরাও চেষ্টা কর পাবা।’
তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রকল্প কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন। তাঁর দাবি, বিধি অনুযায়ী ঋণ দিয়েছেন তিনি।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের ভাষ্য, অনিয়মের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে, কেন গ্রাহক হয়রানি করল তারা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ময়মনসিংহ বিআরডিবির উপপরিচালক ভবেশ রঞ্জন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে অনিয়ম হয়ে থাকলে আমি বিষয়টি দেখব।’