দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি তারা। জাপার একটা বড় চাওয়া হলো, আসন কম হলেও তাদের ছাড় দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকতে পারবে না। এমনকি সেসব আসনে আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, যেসব আসনে জাতীয় পার্টির বিজয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকবে সেখান থেকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সরিয়ে নেওয়ার একটা সমঝোতা হয়েছে। কিন্তু সেসব আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে না— এটার নিশ্চয়তা জাতীয় পার্টিকে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সবাই যে আওয়ামী লীগের কথা শুনবে এবং নির্বাচন থেকে সরে যাবে সেটা নাও হতে পারে।
জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেওয়া আসনে নৌকার প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া হলেও সেখানে যদি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকে তাহলে নৌকার ভোট আমার পাব না। নৌকার ভোট তখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে চলে যাবে। সেখানে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা হবে। তখন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হওয়া কঠিন হবে। এই রকম সমঝোতার কোনো অর্থ নেই। আমরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীও নির্বাচনে থাকবে না এমন শর্তে সমঝোতা চাই।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। কিন্তু সমঝোতা হয়েছে এটা বলতে পারছি না। কারণ আওয়ামী লীগ আমাদের পরে জানাবে বলেছে। সেটা কখন হবে আমরা জানি না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি ঠিক কিন্তু সিদ্ধান্ত তো কিছু আসছে না। নির্বাচনে দাঁড়াতে বলেছে, দাঁড়িয়েছি। কী সিদ্ধান্ত আসে সেটার জন্য সবাই অপেক্ষায় আছি।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সমঝোতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তারা সব প্রার্থী নিয়ে নির্বাচন করছে। আমরাও সেটা চাই। জাতীয় পার্টির সঙ্গে যে সমঝোতা, সেটার চেষ্টা চলছে। আমরা সুন্দর ও উৎসবমুখর নির্বাচন চাই, সেই কারণে জাতীয় পার্টির সব প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেবে।
বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, যে সমস্ত জায়গায় তাদের (জাতীয় পার্টির) ইলেকটেবল প্রার্থী আছে, সেখানে আমরা আমাদের প্রার্থীদের সরিয়ে দিতে পারি। এই ধরনের একটা আলোচনা আছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ বর্তমান এক সংসদ সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কয়েক দফায় আমাদের বৈঠক হয়েছে। দুই পক্ষ থেকেই আসন সমঝোতা নিয়ে লিস্ট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো ফলাফল আসেনি। আশা করছি, উভয় পক্ষই নিজ-নিজ স্বার্থ বজায় রেখে একটা অবস্থানে এসে ছাড় দেবে।
এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, তবে কোনো অবস্থাতেই জাপার সংসদ সদস্য আগের চেয়ে কম হবে, সেই পথে এগোনো যাবে না। আমাদের টার্গেট হলো বেশি সংসদ সদস্য নিয়ে সংসদে যাওয়া, কেন্দ্রে ভোটার আনা এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করা।
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের কাছ থেকে জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে ৪০টির বেশি আসনে ছাড় চায়। প্রয়োজনে আরও কম দিলেও তারা রাজি থাকবে, তবে শীর্ষ নেতাদের আসনে ছাড় দিতে হবে।
আমরা আওয়ামী লীগের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা মাথায় নিয়ে নির্বাচন করতে পারছি। তাহলে তারা (আওয়ামী লীগ) কেন এটুকু ছাড় দিতে পারবে না?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় পার্টির এক কো-চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের কথা একটাই— আওয়ামী লীগ আমাদের যেসব আসন ছাড় দেবে, সেখানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকতে পারবে না। শুধু তাই নয়, সেখানে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীও থাকতে পারবে না। সেখানে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ যেসব ছোট দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের প্রার্থী থাকতে পারবে।
আপনাদের এমন চাওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? জানতে চাইলে জাপার এই নেতা বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা মাথায় নিয়ে নির্বাচন করতে পারছি। তাহলে তারা (আওয়ামী লীগ) কেন এটুকু ছাড় দিতে পারবে না?
আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। জাতীয় পার্টি আশা করছে তার আগেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের একটা সমঝোতা হয়ে যাবে।