বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)—কে লুটেরাদের হাত থেকে রক্সা করার দাবীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে সর্বস্তরের দলিত জনতা। গত ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ (শনিবার), সকাল ১১.০ মিনিটে ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি হলরুমে এ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেস করেন সংগঠনের আহবায়ক তাতপুরী জেমস বিশ্বাস।
এ সময় মঞ্চে উপস্থে ছিলেন ভীম্পাল্লি ডেভিড রাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক, বিডিইআরএম এবং সাধারণ সম্পাদক, বিডিএইচআর ও বধাংকি প্রেমা, প্রয়াত বিজি মুর্তি এর ছেলে।
সম্মেলনকালে বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমান দলিত জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ আমলে ১৮৩৫ থেকে ১৮৫০ এর মধ্যে তিনবার এই অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়। প্রথমত চা বাগানের জঙ্গল পরিস্কার করার কাজে, দ্বিতীয়ত ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে ও ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে। বর্তমানে বাংলাদেশে দলিত জনগোষ্ঠীর প্রায় ১ কোটি মানষের বসবাস। যারা প্রায় সবাই অস্পৃশ্যতার শিকার। দলিতরা প্রতিনিয়ত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন, কর্মক্ষেত্র, ব্যবসা বাণিজ্য, আবাসন এমনকি মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রেও বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হয়। অঞ্চলভেদে এই বৈষম্যের তারতম্য থাকলেও কঠিন এবং কঠোর প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দলিতদের জীবনযাপন করতে হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করা হলেও স্বাধীনতার ৫২ বৎসর পরও বৈষম্য বিরাজমান।
এই সকল বৈষম্য দুর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে দলিত আন্দোলন নতুন রূপে ২০২২ সালে বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইট্স (ইউঐজ) নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়। বাংলাদেশের সমস্ত দলিতদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়াত দলিত নেতা বিজিমুর্তি এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন। বিগত ২০০৬ সালে ২৪ শে অক্টোবর তিনি সবাইকে ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান। এরপর সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন। হাটি হাটি পা পা করে দলিত আন্দোলন সংগ্রাম সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। তখনকার সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অফিস হিসেবে ৮/১৪, ব্লক—বি, লালমাটিয়া, ঢাকা—১২০৭ নাগরিক উদ্যোগ নামক এনজিও অফিসের গ্যারেজ ব্যবহার করা হয়। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইট্স সংগঠনটির ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে আসে, ওয়ান ওয়ার্ল্ড এ্যাকশন নামক লন্ডনে অবস্থিত দাতা সংস্থার নিকট থেকে প্রকল্প হিসেবে সংগঠনের কার্যক্রম বেগবান করার জন্য কিছু অর্থ প্রদান করেন।
কিন্তু নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন আমাদের দলিত নেতৃবৃন্দদের ভুল—ভাল বুঝিয়ে তথা বোকা বানিয়ে প্রকল্পটা নিজ এনজিও’র দখলে নিয়ে পরিচালনা করতে থাকেন। দিনে দিনে আমাদের জাতীয় সংগঠন এর নেতৃবৃন্দদের কোন মত প্রকাশের সুযোগ না দিয়ে নিজের মতো করে সব জায়গায় প্রচার করতে থাকেন যে, নাগরিক উদ্যোগ দলিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আন্দোলন করে। সংগঠনটির গঠন তন্ত্রের পরিপন্থী নিজ ক্ষমতা বলে স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়ম—নীতি তোয়াক্কা না করে দলিত নেতৃবৃন্দদের দিয়ে তার নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য রথ বদল করেন এবং বিনা কারণে তার অফিস থেকে দলিত ছেলেমেয়েদের চাকরিচ্যুত করেন।
একটি ঘটনা এরকম, গত মে—২০২৩ ইউঊজগ—এর জেলা পর্যায়ের সাংগঠনি কাজে ভীম পাল্লী ডেভিড রাজু’কে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়। কাজ শেষে তিনি অফিসে আসলে তার হাতে একটি নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয় তিনি অফিসে না জানিয়ে জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কাজে গিয়েছেন, উল্লেখ থাকে যে, ওই প্রকল্প থেকেই সমস্ত খরচের টাকা দিয়ে তাকে পাঠানোর পরও বিভিন্নভাবে পায়তারা করে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এ নাটক আমাদের বোধগম্য নয়।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন হলে বেড়ান, তিনি “দলিতদের ভগবান” এবং তার স্টাফরা দলিত নেতদের নেতা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ইউঊজগ—এর দলিত অধিকার প্রকল্পের সমন্বয়কারীর দায়িত্বে যিনি রয়েছেন তিনি কম্পিউটারে দুইটি অক্ষরও টাইপ করতে পারেন না। কিন্তু তিনি মাসে বেতন নেন ৭০ থকে ৮০ হাজার টাকা। তিনি হলেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জনাব জাকির হোসেনের মামাতো ভাই। দলিত প্রকল্পে মাষ্টার্স পাশ করেও নামেমাত্র যে দলিত ছেলে—মেয়েরা কাজ করে তাদের বেতন ২০ হাজার এর বেশি হয় না। দলিত মেয়েরা যারা কমিউনিটি মবিলাইজার হিসেবে কাজ করে তারা সারা মাস কাজ করে পায় ৭ হাজার টাকা। কিছু বললে হুমকি দিয়ে বলা হয় চাকরি করার দরকার নাই।
উক্ত অভিযোগগুলোর স্বাক্ষি, বিগত সাবেক নির্যাতিত দলিত নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে শুনতে পারেন। তাদের প্রত্যেকের নাম ও সাংগঠনিক পরিচয় যথাক্রমে— সাবেক সভাপতি— শ্রদ্ধেয় বাবুলাল সরদার, সাবেক সভাপতি— শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল রঞ্জন সিকদার, সাবেক সভাপতি— শ্রদ্ধেয় সুনীল কুমার মৃধা, সাবেক সাধারণ—সম্পাদক— শ্রদ্ধেয় মিলন দাস, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক— শ্রদ্ধেয় অশোক দাস, সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক— শ্রদ্ধেয় শান্তি মন্ডল, সাবেক যুগ্ম সাধারণ—সম্পাদক— শ্রদ্ধেয় সুরাজ কুমার দাস, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক— শ্রদ্ধেয় অ্যাডভোকেট নারায়ন কর্মকার, সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক— শ্রদ্ধেয় দিলীপ বাশফোর, সাবেক যুব সেক্রেটারী— সজীব কুমার রায়, নীলফামারী জেলার সাবেক সাধারন—সম্পাদক— নন্দ কুমার বাশফোর, ইউঐজ—এর সাবেক কোষাধ্যক্ষ— তাতপুরী জেমস বিশ^াস সহ আরও অনেকেই।
তাই আমাদের দাবী, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জনাব জাকির হোসেনের কুক্ষিগত থেকে বের করতে চাই। দলিতদের পণ্য বানিয়ে নিজের লাভের জন্য ক্যাম্পেইন নামে প্রকল্পগুলো বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি। তাই দলিত সাধারণ মানুষ, দেশবাসী সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
উল্লেখ্য, গত ২১ নভেম্বর এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করা হয়। কিন্তু নাগরিক উদ্যোগ বা নাগরিক উদ্যোগ এর প্রধান নির্বাহী জনাব জাকির হোসেনের কাছে থেকে এখনও কোন সুরাহা বা মতামত পাওয়া যায়নি।