ইলিশের ৬টি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। দু’মাস বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন মেঘনার শাখা-প্রশাখা নিয়ে গঠিত ষষ্ঠ অভয়াশ্রমে এবং বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দিগঞ্জের বামনীর চর পর্যন্ত ১৩ দশমিক ১৪ কিলোমিটার, মেহেন্দিগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার, হিজলার মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দিগঞ্জে সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিলো। ইলিশ রক্ষায় অভয়াশ্রমগুলোতে টানা ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় নতুন স্বপ্ন নিয়ে শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকেই নদীতে নামছে বরিশাল বিভাগের ৩ লক্ষাধিক জেলে। এর মধ্যে বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা সংলগ্ন মেঘনার ষষ্ঠ অভায়াশ্রমেও মাছ ধরা শুরু করতে যাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার জেলে।
এছাড়া নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া ৮ মাসের জাটকা ইলিশ (২৫ সে.মি. এর ছোট) সাইজের ইলিশ ধরা, বিক্রি, মজুত ও পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সর্বোচ্চ দু’বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
জানা গেছে, এবার তেমন নজরদারী না থাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এ অ লের জেলেরা ছোট সাইজের ইলিশ মাছ শিকার অব্যাহত রাখে। করোনাভাইরাস সংক্রমণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ব্যস্ত থাকায় নদ-নদীতে অভিযান প্রায় বন্ধ থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়েছে অসৎ জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, করোনা ভাইরাসের ফলে নদীতে তেমন একটা অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় অবাধে শিকার হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার পুরো সময়টাতেই পাইকারী ও খুচরা বাজারে অবাধে এসব ছোট মাছ বিক্রি হয়েছে। পাইকারী মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র (পোর্ট রোডের মোকামে) প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক জাটকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাঝে মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিধনকৃত ছোট মাছ পাচারকালে নদীতে কিংবা যাত্রী বাহী বাস, ট্রাকে ২/১টি চালান আটক হলেও মুল হোতারা থেকে যায় ধরা-ছোয়ার বাইরে। অধিকাংশ অভিযানেই মাছ ও ট্রলার আটক হলেও সাথে থাকা লোকজন পালিয়ে যায়।
মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আনিছুর রহমান তালুকদার জানান, ইলিশ রক্ষায় অন্যান্য অভয়াশ্রমের মত ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমেও টানা ২ মাস নিষেধাজ্ঞা ছিল। মৎস্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমে ৬৭২টি অভিযানে ১৭৩টি মোবাইলকোর্ট ৭২৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও ১৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে জাটকা নিধন বন্ধ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তারা বলেন, জাটকা নিধন না হলে ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তো দূরের কথা মৌসুমে ইলিশ সংকট দেখা দিবে বলে জানান তিনি। তাই অভয়াশ্রমের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সাথে সাথে জাটকা ইলিশ যাতে অবাধে নিধন না হয় সে জন্য প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর দাবী জানান বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা।