নিজ রুমে নিয়ে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীর শরীরের আপত্তিকর স্থানে স্পর্শ করার অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বরাবর এই অভিযোগপত্র দেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। পরে উপাচার্য অভিযোগটি গ্রহণ করে তদন্ত করবেন বলে জানান।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষার্থী। গত ১১ সেপ্টেম্বর হল বিষয়ে পরামর্শ নেওয়ার জন্য ইনস্টিটিউটের অফিস কক্ষের সামনে গেলে তিনি (শিক্ষক) আমাকে নিজে থেকে তার কক্ষে ডাকেন। তখন আমি স্যারের কক্ষে যাই। স্যার আমাকে প্রয়োজনীয় দুই-একটা কথা বলার পরপরই অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতে শুরু করেন। তিনি আমাকে নানা রকমের সাহায্যের প্রলোভন দেখান এবং আমাকে বলতে থাকেন- আমি যেন একা তার সাথে দেখা করি এবং তার কাছ থেকে বই নিই। তাছাড়া তার বিষয়ে বা তার সাহায্যের বিষয়ে যেন কাউকে কিছু না বলি।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, তিনি আমার সেল ফোন নাম্বার নেন এবং এক রকম জোর করেই আমার মেসেঞ্জারে নক করেন এবং যুক্ত হন। তার কথার ধরন এবং অঙ্গভঙ্গি আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হলে তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়াই। তখন তিনি নিজেও তার নিজ আসন ছেড়ে আমার কাছে উঠে আসেন এবং আমাকে যৌন নিপীড়ন করেন। তিনি বারবার বলতে থাকেন, ‘তোমাকে আমার ভালো লেগেছে’। তিনি আমার শরীরের আপত্তিকর স্থানে স্পর্শ করেন। ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে না পেরে আমি ভয়ে তার কক্ষ থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যাই।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে, আমাকে তার রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় সিনিয়র কিছু শিক্ষার্থী দেখেছেন। এরপর আমি এতটাই ভয় পাই যে, মেসে ফিরে যাওয়ার শক্তিও পাচ্ছিলাম না। তাই আমি ক্যান্টিনে কিছু সময় অবস্থান করি। কিছু সময় পর আমাকে পুনরায় ফোন করে তার সাথে দুপুরের খাবার অথবা হালকা নাস্তা বা চা খাওয়ার প্রস্তাব দেন। তখনও আমাকে বারবার এই বিষয়ে যেন কাউকে না জানাই, সে ব্যাপারে সাবধান করতে থাকেন। আমি মানসিক ট্রমা থেকে বের হতে না পেরে প্রচণ্ড ভয়ে দেশের বাড়িতে চলে যাই। যার কারণে আমি আমার চলমান পাঠদান থেকে বিরত থাকি। এমন স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নারী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘নিজ ইনস্টিটিউটে সবাই নিরাপদ থাকে। তাই স্যার যখন ইনস্টিটিউটে নিজ কক্ষে আমাকে ডাকেন তখন আমি যাই। এরপর উনার কথা অসংলগ্ন লাগলে আমি চেয়ার থেকে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াই। কিন্তু উনি দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। আমি সেখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যাই। এরপর উনি ফোন দেন আমি যেন ঘটনাটি কাউকে না বলি। আমি উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। আমি এর বিচার চাই। আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ও ইনস্টিটিউটের পারিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম আজমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।