নতুন এক নিয়মে চলছে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি আইপিএলের এবারের দলবদল। আজ ২৬ নভেম্বর রোববার শেষ হচ্ছে যার আনুষ্ঠানিকতা। আজই সব ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ধরে রাখা খেলোয়াড়ের তালিকা এবং কোন খেলোয়াড়কে তারা ছেড়ে দিচ্ছে তার তালিকা জমা দিতে হবে। এরপর ১৯ ডিসেম্বরের মিনি নিলাম শেষে দল চূড়ান্ত করবে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।
এবারের এই দলবদল এখনই বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে বলা হচ্ছে ট্রেডিং। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভনের মতে এই ট্রেডিং পদ্ধতিই ক্রিকেটের ফুটবল হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ। মাইকেল ভনের এমন মন্তব্যের পেছনে অবশ্য কিছু কারণও রয়েছে। মাইকেল ভনের এমন কিছু মনে হওয়ার পেছনে বড় ধরণের কারণও আছে।
আইপিএল ট্রেডিংয়ের নিয়ম অনুসারে এক খেলোয়াড়কে দলে নিতে আরেক দলকে খেলোয়াড়ের মূল তো পরিশোধ করতেই হবে। সঙ্গে দিতে হবে একটি আলাদা ট্রান্সফার ফি। যার অর্ধেক ফি আবার সেই খেলোয়াড় নিজেই পাবেন। যেটা ফুটবলের ট্রান্সফার উইন্ডো থেকে কোন অংশেই খুব একটা ব্যতিক্রম না। এমনকি আছে খেলোয়াড় অদল-বদল বা ধার নেওয়ার সুবিধাও। যে সুযোগ নিয়ে রাজস্থান এবং লখনৌ নিজেদের মধ্যে খেলোয়াড় আদান-প্রদান করেছে। আভেস খান গিয়েছেন রাজস্থানে। অন্যদিকে দেবদূত পাডিক্কাল রাজস্থান থেকে নাম লিখিয়েছেন লখনৌতে।
ট্রেডিংয়ের নিয়ম ও শর্ত:
১. আইপিএলে ট্রেডিং অপশন খোলা থাকবে কেবল দুই সময়। এক মৌসুম শেষের ৭ দিন পরেই খোলা হয় প্রথমবারের ট্রেডিং উইন্ডো এবং দ্বিতীয়বার খোলা হয় প্রতিযোগিতা শুরুর ৩০ দিন আগে।
২. যে ক্রিকেটারদের নিলামে কেনা হয়, তাকে বা তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলি পরের মুহূর্তেই ট্রেড করতে পারবে না।
৩. যদি কোনও বিদেশি ক্রিকেটারদের ট্রেডিং করা হয়, তাহলে যেই ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে কিনবে, তাকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) নিতে হবে বোর্ড থেকে। এছাড়াও, যেই ক্রিকেটারগুলিকে কেনা হচ্ছে তারা ১০০% ম্যাচ ফিট কিনা, সেটাও দেখতে হবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিকে।
৪. একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি যত ইচ্ছা তত ক্রিকেটার কিনতে পারবে। তবে মাথায় রাখতে হবে বেতন এবং দল গঠনের নিয়মের দিকে। এছাড়াও ক্রিকেটাররা ফ্র্যাঞ্চাইজিদের থেকে টাকা পাবেন চুক্তি অনুযায়ী।
যদি একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি একই ক্রিকেটার কিনতে চান তাহলে সব পক্ষকে আলোচনায় বসতে হবে। এক্ষেত্রে খেলোয়াড় কোন দলে যেতে আগ্রহী তা প্রাধান্য পাবে না। শুধুমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজির হাতেই থাকবে ক্ষমতা।
কিভাবে হয় ট্রেডিংয়ের চুক্তি?
ফ্র্যাঞ্চাইজিরা ট্রেডিং উইন্ডো চলাকালীন অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজির কাছে ক্রিকেটারদের (ডিল করে থাকা ক্রিকেটারদের) তালিকা পাঠাতে পারে, যাদের তারা ট্রেড করে কিনতে চান। এই তালিকা এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট (ইওআই) হিসেবে গণ্য করা হবে। এরপর এই বিষয়ে বিসিসিআই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। এরপর ইমেইলের মাধ্যমে বিসিসিআইকে জানাতে হবে যে, তারা নিজেদের ক্রিকেটারকে ট্রেডের জন্য উপস্থিত করতে চান কিনা। যদি না জানানো হয় তাহলে ইওআই গণ্য করা হবেনা। দরকারে ট্রেডিং হতে যাওয়া ক্রিকেটারদের থেকেও কনসেন্ট ফর্ম সই করিয়ে নেওয়া হবে।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে যদি একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি একই ক্রিকেটার কিনতে চান তাহলে সব পক্ষকে আলোচনায় বসতে হবে। এক্ষেত্রে খেলোয়াড় কোন দলে যেতে আগ্রহী তা প্রাধান্য পাবে না। শুধুমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজির হাতেই থাকবে ক্ষমতা।
‘নেগোসিয়েটেড ইনক্রিজ’ ও ‘নেগোসিয়েটেড ডিক্রিজ’ কী?
ট্রেডিং পদ্ধতির সবচেয়ে জটিল দিক সম্ভবত নেগোসিয়েটেড ইনক্রিজ এবং ডিক্রিজ। ‘নেগোসিয়েটেড ইনক্রিজ’এর ক্ষেত্রে বিসিসিআই জানিয়েছে, ‘যদি ফ্র্যাঞ্চাইজিরা নেগোসিয়েটের ইনক্রিজে রাজি হন, তাহলে ক্রিকেটার এবং সেলিং ফ্র্যাঞ্চাইজির (যারা খেলোয়াড় বিক্রি করবে) মধ্যে কনসেন্ট ফর্ম অনুযায়ী সেটি ভাগ করে নেওয়া হবে।
সে হিসেবে একইভাবে ক্রিকেটারও একটি নতুন চুক্তির আওতায় পড়বেন। যে ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনবে এবং সেলিং ফ্র্যাঞ্চাইজিকে চুক্তি অনুযায়ী সেই ভাগও দিতে হবে। যেমনটা হচ্ছে হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে।
অন্যদিকে ‘নেগোসিয়েটেড ডিক্রিজ’-র ক্ষেত্রে বিষয়টা পুরোপুরি খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করবে। এমন অনেক সময় আসতে পারে যখন কোনও ক্রিকেটার স্বেচ্ছায় নিজের ‘লিগ ফি’ কমানোতে রাজি হবেন। সেই ক্ষেত্রে বায়িং ফ্র্যাঞ্চাইজি (যারা খেলোয়াড় কিনবে) সেলিং ফ্র্যাঞ্চাইজি (যারা খেলোয়াড় বিক্রি করবে) থেকে চুক্তিবদ্ধ হওয়া অঙ্কটি পাবেন একবারের জন্য।
বলে রাখা ভালো, পরের দিকে এই ব্যাপারটি থাকবেনা এবং সেই হিসেবে একইভাবে ক্রিকেটারটি নতুন চুক্তির আওতায় পড়বেন এবং ওই অঙ্কেরই লিগ ফি পাবেন। তাকে লিগ ফি বাড়াতে হলে আবার নতুন করে নেগোসিয়েশন ইনক্রিজে যেতে হবে।