বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ওয়াশিংটন-মস্কোর পাল্টাপাল্টি বক্তব্যকে ‘অনভিপ্রেত’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ নিয়ে ঢাকা আলোচনার পক্ষে নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দিল্লিতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে দেশে ফিরে আজ (রোববার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নিয়ে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নিয়ে মাসুদ বিন মোমেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, দেখুন, এটা আমি মন্তব্য করতে চাই না। বাংলাদেশে কী হচ্ছে-না হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমরা বলতে পারি। তৃতীয় বা চতুর্থ দেশ, এরা তাদের মধ্যে কী আলাপ-আলোচনা করছে, এটা আমাদের জন্য খুব একটা… বিষয়টা অনভিপ্রেত বলা যায়। আমরা আলোচনা করতে চাই না।
ঢাকা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা না করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি তো বাংলাদেশ নিয়েই। এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এর আগে চীনকেও দেখেছি আলোচনা করতে। আমরা তো কারও কাছে অনুরোধ করিনি মন্তব্য করতে।
গত ২২ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস অক্টোবরের শেষের দিকে সরকারবিরোধী সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে বিরোধী দলের একজন সদস্যের সঙ্গে দেখা করেন।
এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্থূল হস্তক্ষেপের চেয়ে কম কিছু নয় বলে মন্তব্য করেন জাখারোভা।
মারিয়া জাখারোভা বলেন, খবর পাওয়া যায় যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও বিরোধী দলের নেতা ওই বৈঠকে সরকারবিরোধী বড় প্রতিবাদ সমাবেশ করার বিষয়ে পরিকল্পনা করেছেন।
রুশ মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার অজুহাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে এবং এ বিষয়টি আমরা অনেকবার বলেছি। আজ আমি আবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি।
রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের প্রতিক্রিয়া পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে ওই প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে মারিয়া জাখারোভা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও পিটার হাসের বিভিন্ন বৈঠকের বিষয়াদি ভুলভাবে উপস্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না। বাংলাদেশের কোনো দলকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দেয় না।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, আমরাও তা চাই এবং সেটি হচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের ও বাংলাদেশের জনগণ উভয়ের লক্ষ্য হচ্ছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন।
মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা সরকার, বিরোধী দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে বলেও প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়।
রাশিয়ার জাখারোভার বক্তব্য জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক
মারিয়া জাখারোভার বক্তব্য নিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাশিয়ার বক্তব্য একটি স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রিজভী বলেন, গত ২২ নভেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক (এফএমএ) মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে যে টুইট করেছেন, তা বাংলাদেশের জনগণ এবং বিএনপির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই টুইটে তিনি বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজনে বিরোধী দলের সঙ্গে পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগও করেছেন।
মারিয়া জাখারোভার বক্তব্য বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেন বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।