বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে বিদেশি দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটারদের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষক পাঠাতে আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ মিশনে বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তিনি রাষ্ট্রদূতদের বলেছেন বাংলাদেশের জনগণ এই উৎসব উদযাপন করতে এবং তাদের পছন্দের প্রতিনিধিদের ভোট দিতে ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদের সঞ্চলনায় ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মুস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ এশিয়া) এ টি এম রকিবুল হক এবং ভারতের মূলধারার সাংবাদিকরা যোগ দেন।
গণমাধ্যম কর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে দেশের সংবিধানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রতি পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন হওয়া সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, তাই সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
‘বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণের ইচ্ছা আমাদের বিশেষাধিকার। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ পছন্দ করি না। আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি শিগগিরই মিয়ানমারের নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কূটনীতিকদের নিজ নিজ দেশের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি তাদের বলেন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে প্রত্যাবাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘চূড়ান্ত সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তন, কারণ তারা বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল বোঝা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং মিয়ানমারে নির্যাতিত ১১ লাখ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রতি বছর ৩৪ হাজারেরও বেশি নবজাতক শিশু যুক্ত হচ্ছে।
ব্রিফিংয়ের কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তিনি তুলে ধরেছেন।
জবাবে, বিদেশি কূটনীতিকরা তাকে বলেছিলেন— তারা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রতি ‘খেয়াল রাখছেন’ এবং বিস্মিত হয়েছেন যে বাংলাদেশ গত কয়েক বছরের মধ্যে কীভাবে লক্ষ্য অর্জন করেছে। তারা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন তাদের মুগ্ধ করেছে।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতির অগ্রাধিকার ও গতিশীলতার কথাও তুলে ধরেন।
ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (সিইপিএ) প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশ ও ভারত সিইপিএ বাস্তবায়নে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।
কূটনৈতিক ব্রিফিং অধিবেশনে মাসুদ আগামী ১ ডিসেম্বর লন্ডনে অনুষ্ঠেয় ২০২৪-২৫ মেয়াদের জন্য ‘সি’ ক্যাটাগরির আওতায় ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের সদস্যপদের জন্য নিজ নিজ সরকারের সমর্থন কামনা করেন।
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দুই সীমান্ত বাহিনীর সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ৫৪ জন রাষ্ট্রদূত এবং তাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।