দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আয়কর সনদ জমা দিতে হবে। আয়কর সনদ জমা না দিলে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যেতে পারে।
ইসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সব আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনাও দিয়েছেন।
সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সর্বশেষ আয়কর বিবরণী এবং টিআইএন দাখিলের প্রমাণক সংযুক্ত করার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব মো. ফরহাদ আহাম্মদ খানকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর সর্বশেষ আয়কর সনদ দাখিলের বিষয়ে সুষ্পষ্ট পরিপত্র জারি করারও নির্দেশনা দিয়েছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ এর ৩(খ)এর(ঝ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আয়কর আইন, ২০২৩- এর ধারা ১৬৬-এর অধীন দাখিল করা রিটার্নের প্রত্যায়িত অনুলিপি এবং ওই আইনের ধারা ২৬৪ এর বিধান অনুসারে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, আগে টিআইএন এবং আয়কর বিবরণী জমা দিলেই হতো। এবার থেকে আয়কর সনদও জমা দিতে হবে। অন্যথায় বাতিল হতে পারে মনোনয়নপত্র।
এদিকে, আরপিওতে প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আদালত থেকে কোনো ব্যক্তি যদি ’অপ্রকৃতিস্থ’ বলে ঘোষিত হন, তবে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার যোগ্য-অযোগ্যতার বিধানে এমনটিই বলা হয়েছে সংবিধানেও। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের দফা ১ ও ২ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হলে এবং ২৫ বছর বয়স হলে সংসদের সদস্য নির্বাচিত হতে এবং সংসদ সদস্য থাকতে পারবেন। এটিকে যোগ্যতা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
আবার এই যোগ্যতা থাকলেও অন্য কারণে একজন ব্যক্তি অযোগ্য হতে পারেন। এক্ষেত্রে কোনো উপযুক্ত আদালত থেকে তিনি অপ্রকৃতিস্থ হিসেবে ঘোষিত হলে, দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে, কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে তা অযোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে। তবে পরবর্তী সময়ে যদি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন কিংবা পুনরায় বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তবে অযোগ্য হবেন না।
কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কারণে কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ড পেলে, কারাভোগের পর পাঁচ বছর সময় অতিবাহিত না হলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না।
অন্যদিকে, ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীনে যে কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হয়ে থাকলে এবং প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে আসীন থাকলেও সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হতে হবে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি (রোববার)।