ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর সাথে ইরান-সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী হিজবুল্লাহর আন্তঃসীমান্ত সংঘাতে লেবাননে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। উভয়পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় সীমান্ত এলাকা থেকে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য লেবাননের অন্যান্য অঞ্চলে পাড়ি জমাচ্ছেন। গত কয়েক দিন সীমান্তের এই সংঘাতময় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
রোজ রোস্তম, নাহিদা মাশৌজ এবং আম্মার হাজেহ লেবাননের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা। অতীতে সিরিয়ার যুদ্ধবিমান, ইসলামিক স্টেট (আইএস), পশ্চিমা-সমর্থিত বাহিনী বা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় বহুবার তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। এবার ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর সংঘাতেও তারা বাড়ি ছাড়া হয়েছেন।
লেবাননের এই তিন নাগরিক বলেছেন, তারা কমপক্ষে ২০ বার বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। সর্বশেষ হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সীমান্ত সংঘাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন তারা। গাজায় হামাসের সাথে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি বাহিনীর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। এই হামলার জবাবে লেবাননে ড্রোন ও বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাশৌজ বলেছেন, তিনি একজন সিরীয় শরণার্থী। আর আম্মার হাজেহ ফিলিস্তিনি শরণার্থী। ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলা রোস্তমকে দক্ষিণ লেবাননে তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। একই ভাবে দক্ষিণ লেবাননে অস্থায়ী বাসস্থান ছেড়েছেন মাশৌজ।
তাদের পরিস্থিতি ভিন্ন। কিন্তু তিনজনই এমন একটি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন যেটি বারবার গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সহিংসতা লেবাননের অর্থনৈতিক সংকটকে অত্যন্ত জটিল করে তুলেছে। যদিও এর আগে থেকেই দেশটিতে সামাজিক উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক সংকট গুরুতর রয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় সাত সপ্তাহ আগে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল-লেবাননের সীমান্তে সংঘর্ষে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। লেবাননের কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলের হামলায় লেবাননে কমপক্ষে ১৩ বেসামরিক নিহত হয়েছেন।
রোস্তম বলেছেন, ‘‘গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই ইসরায়েলে হামলা শুরু করে হিজবুল্লাহ। এরপর আমাদের বাড়ির চারপাশে বোমা পড়ছে। সীমান্তের এই সংঘাত আমাকে তৃতীয়বারের মতো বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছে।’’
স্বামী, দুই ছেলে এবং নাতি-নাতনিকে নিয়ে বর্তমানে তিনি লেবাননের উপকূলীয় শহর সিডনে তার এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ১৯৮০’র দশকে লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় তিনি দুবার বাড়ি ছেড়েছিলেন।