স্কুল ভবনের একাংশ বিক্রি করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি জানেন না স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। নিলাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়া এভাবে স্কুল ভবনের কোনো অংশ বিক্রি করার বিধান নেই, ভবন বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ঘটনাটি শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া সমিতির হাট উচ্চ বিদ্যালয়ের। গতকাল বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে স্কুল ভবনের একাংশ ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা গেছে শ্রমিকদের।
স্কুলের প্রধান ভবনের ওপর একটি টিনশেড তলা ছিল। তলাটি ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ। ক্রয় করেছেন চিতলিয়া গ্রামের হামেদ সরদারের ছেলে জুয়েল সরদার ও লালচাঁন সরদারের ছেলে মিয়ন সরদার।
স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্কুলের প্রধান ভবনের ওপরে আরও দুটি তলা নির্মাণ হবে। এজন্য ওপরের টিনশেড তলাটি অপসারণের জন্য প্রায় তিন মাস আগে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির উপস্থিতিতে একটি সভা হয়েছিল। সভায় টিনশেড তলাটি বিক্রির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে প্রধান শিক্ষকের দাবি সভাপতির উপস্থিতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এমবি আলম, সহকারী প্রধান শিক্ষক বজলুর রশিদ ও শরীর চর্চা শিক্ষক সিরাজুল হককে টিনশেড তলাটি বিক্রি করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা নিলাম না ডেকে স্থানীয়ভাবে সবাইকে জানিয়ে টিনশেড তলাটি জুয়েল সরদার ও মিয়ন সরদারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন।
ভবনের একাংশের ক্রেতা জুয়েল সরদার ও মিয়ন সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্কুলের টিনশেড তলাটি বিক্রি হবে বলে আমাদেরকে প্রধান শিক্ষক ও বজলুর রশিদ স্যার জানিয়েছিলেন। অন্যান্যরা ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দাম বলেছিল। আমরা ৯০ হাজার টাকায় তলাটি কিনে নিয়েছি। এখন শ্রমিক দিয়ে ভেঙে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকার মানুষের অনুদান ও স্কুলের ফান্ড থেকে টাকা নিয়ে মূল ভবনের ছাদের ওপর একটি টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। ভবনটি বিক্রির জন্য নিলামের ব্যবস্থা করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে অনেককেই জানানো হয়েছিল, তাদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। যা নিলামের মতই। সভাপতি জানেন যে, টিনশেড তলাটি বিক্রি করা হয়েছে। তিনি যে বলছেন বিক্রির বিষয়ে তিনি জানেন না, সেই কথা তিনি বলতে পারেন না। টিনশেড ভবনটি বিক্রির জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছিল। ওই কমিটি স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করেছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এমবি আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিনশেড তলাটি অপসারণ বিষয়ক সভায় আমি প্রস্তাব করেছিলাম, শিক্ষা অফিসার ও ইউএনও স্যারকে জানিয়ে পেপারে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিলাম ডেকে তলাটি বিক্রি করা হোক। কিন্তু আমাকে কোনো কিছু না জানিয়ে প্রধান শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক বজলুর রশিদ মিলে তার ভগ্নিপতির কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। তলাটি বিক্রির বিষয়ে আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলছেন তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ওলিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিনশেড ভবনটি বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। মিটিংয়ে রেজুলেশন হয়েছিল তলাটি অপসারণ করা হবে।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্কুলের বিক্রি করা ভবনের মালামালগুলো জব্দ করা হয়েছে। ভবন বিক্রিতে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নিলাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়া স্কুল ভবনের কিছুই বিক্রি করা যায় না। শিগগিরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।