বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকা থেকে বাবা-ছেলেকে তুলে নিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে কাউনিয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রেদোয়ান হোসেন রিয়াদ ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল করায় ঘটনা জানাজানি হলে ৬ ঘণ্টা পর বাবাকে ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে আটক দেখানো হয়।
কাউনিয়া থানায় আটক থাকা কলেজছাত্র আব্দুল্লাহ বিন লাদেনের বাবা মোসলেম জোমাদ্দার বলেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গে আমাদের একটি মামলা রয়েছে। মামলার আজকের মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আমি ও আমার ছেলে মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর থেকে উপবন নামে একটি লঞ্চে করে বরিশালে আসি। বরিশাল লঞ্চঘাটে নামার পর পুলিশ পরিচয়ে দুইজন ব্যক্তি আমাদের পথরোধ করেন এবং নাম-পরিচয় জেনে শরীরে তল্লাশি করেন। তখন কিছু না পেলেও পাশে মাটিতে পড়ে থাকা একটি নীল রংয়ের কাগজ দেখিয়ে বলেন এই যে মাদক পাওয়া গেছে। তারা আমার ছেলেকে মারধর করতে থাকেন।
এরপর পুলিশ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তির মধ্যে একজন আমাকে রিকশায় উঠান। আরেকজন তার সাথে মোটরসাইকেলে আমার ছেলেক উঠান। পরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে একটি মাঠের (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) পাশে নিয়ে যান। আর এর মাঝেই আমার ছেলেকে মারধর করে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। সেজন্য বাড়িতে আমাদের মোবাইল দিয়েই ফোন দিয়ে টাকা চাইতে বলেন। বাড়ির লোকজন কোথায় আছি বার বার জানতে চাইলেও তারা তা জানাতে নিষেধ করে। অনেক সময় পর ৪০ হাজার টাকা দাবি করে ওই পুলিশ সদস্যরা একটি বিকাশ নম্বর দেন।
মোসলেম জোমাদ্দারের ভাতিজা আব্দুর রহিম বলেন, চাচা ও চাচাতো ভাই অপহরণ হওয়া এবং টাকা দেওয়ার বিষয়টি আমরা জানতে পারলে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করি। এরই মধ্যে প্রতিপক্ষ গ্রুপের লোকজনও বিষয়টি জানায়। এরপর যারা টাকা চাচ্ছিল তাদের দেওয়া একটি বিকাশ নম্বরের খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেটা বরিশাল নগরের আমতলার মোড়ে অবস্থিত। তাদের উদ্ধারে আমরা কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে যাই ও ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেই। কোতোয়ালি থানা পুলিশ বিষয়টি জানে না বলে জানালে আমরা সেখানে অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নেই। এরই মধ্যে চাচা আমাকে জানান, আব্দুল্লাহ বিন লাদেনকে কাউনিয়া থানায় আটকে রেখে তাকে কাউনিয়া থানার এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদ চরকাউয়া খেয়াঘাটে মোটরসাইকেলে নামিয়ে দিয়ে গেছে। আর টাকা ম্যানেজ করে তার নম্বরে ফোন দিলে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে।
তিনি বলেন, চাচা মোসলেম জমাদ্দার গ্রামে গরু পালন ও কৃষিকাজ করেন। চাচাতো ভাই বরিশালের সরকারি আলেকান্দা কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। তাদের পক্ষে এত টাকা ম্যানেজ করা সম্ভব না, তাই আমরা এসআই রিয়াদ স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু তিনি টাকা ছাড়া চাচাতো ভাইকে ছাড়তে রাজি হননি। এ অবস্থায় আমরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছি।
আব্দুর রহিম বলেন, চাচা পান ছাড়া কিছুই খান না। আর চাচাতো ভাই তো কোনো ধরনের নেশাই করে না, সেখানে মাদকের সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, রিয়াদ মাদক বিরোধী অভিযান চালিয়ে তিন পিস ইয়াবাসহ ওই যুবককে আটক করেছেন- এমন খবর আমার কাছে রয়েছে। তার কাছে নাকি আরও ইয়াবা পাওয়ার কথা ছিল। অভিযান শেষ করে বিকেলে তাকে থানায় রেখে যান রিয়াদ। এতে যদি এসআই রিয়াদের দোষ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।