এ ঘটনায় গত সোমবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে আহত বৃদ্ধার জামাই নবিবর রহমান ইউপি সদস্য অনিককে প্রধান আসামি করে আরও চারজনের নামে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের দালালপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় ওই বৃদ্ধার জামাই নবিবর রহমানকে (৪২) আবারও মারধর করেন ইউপি সদস্য অনিক ও তার লোকজন।
অভিযুক্তরা হলো- উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য তাছাব্বির হোসেন খন্দকার অনিক (৪০), একই ইউনিয়নের দালালপাড়া এলাকার নুর নবী (৩২), নুর মোহাম্মদ (২০) ও নিলু (৩৪)।
আহতরা হলেন, উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের একই এলাকার মৃত আ. কুদ্দুসের স্ত্রী ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম, তার মেয়ে সুখি বেগম (৪০) ও জামাই নবিবর রহমান (৪২)।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা রেজিয়া বেগম ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। আর তার পাশের বেডেই শুয়ে আছেন মেয়ে আহত সুখি বেগম। আহত রেজিয়া বেগমের দুই হাতেই ব্যান্ডেজ। এ সময় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি বয়স্ক মানুষ। ধান যেমন কইরা মাড়াই করে তেমন করে অনিক মেম্বার আমারে ও আমার মেয়েকে মারছে। আমি তার পা ধইরা কইছি আমাগো মাইরেন না। তখন সে আমারে পা দিয়া লাথি মেরে ফেলাই দিছে। আমি ওর বিচার চাই।’
এ সময় কথা হয় আহত বৃদ্ধার জামাই আহত নবিবর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বৃদ্ধা শাশুড়ি আমার বাড়িতে বেড়াতে আসছে। অনিক ফকির পাড়া ইউপির ৪নং ওয়ার্ড সদস্য। আর আমার বাড়ি ৭নং ওয়ার্ডে। অনিকের সঙ্গে আমার জমি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিবাদ চলে আসছে। সেই বিরোধের জেরে গত রোববার সন্ধ্যায় অনিক মেম্বার ও তার লোকজন আমার বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় আমার স্ত্রী ও শাশুড়ি ঘর থেকে বের হয়ে বাধা দিলে তারা তাদের মারধর শুরু করেন। আমি বাড়ির পেছনে কাজ করছিলাম। চিৎকার শুনে ছুটে যাই। আমি সেখানে যাওয়া মাত্র আমাকেও মারধর শুরু করে। পরে স্থানীয়রা ছুটে এসে আমাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।
আহত নবিবর রহমান আরও বলেন, আমি এ ঘটনায় গত সোমবার দুপুরে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিই। পরে সন্ধ্যার দিকে হাতীবান্ধা ফিলিং স্টেশনের সামনে যাই কাজে। সেখানে অনিক ও তার লোকজন আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আর আমাকে বলে যে, ‘ব্যাটা তুই কার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেইস। তোকে মেরে ফেলব বলে নানা হুমকি-ধমকিও দেয় অনিক মেম্বার।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ৪নং ওয়ার্ড সদস্য তাছাব্বির হোসেন খন্দকার অনিক বলেন, আমি নিজেই আহত। আমি কেন তাদের মারতে যাব। আমি তাদের কোনো মারধর করিনি। তারা যে অভিযোগ করেছে তা মিথ্যা।
এ বিষয়ে ফকিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন বলেন, আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবেন আপনাকে মানুষ কেন মারবে? এটা দেখা লাগবে। এটার কোনো কারণ তো থাকতে হবে। নিশ্চয়ই আপনার কোনো দোষ আছে। আপনারা বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখেন কী ঘটনা।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনারুল ইসলাম বলেন, আহতদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তারা সুস্থ হলেই বাড়ি যেতে পারবে।
হাতীবান্ধা থানার ওসি শাহ আলম বলেন, উভয় পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।