নতুন শিক্ষাবর্ষে স্কুলে ভর্তির আবেদন নেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। আগামী ২৬ নভেম্বর শিক্ষার্থী মনোনয়নের জন্য লটারি হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে মাধ্যমিকপর্যায়ের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদনের সংখ্যা জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে দেখা গেছে, বেসরকারি স্কুলে আসন রয়েছে ১০ লাখের বেশি। কিন্তু এর বিপরীতে আবেদন পড়েছে মাত্র ২ লাখ ৩৮ হাজার। ফলে এসব স্কুলে আসন ফাঁকা থাকছে সাড়ে ৭ লাখের বেশি।
শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছে, দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি স্কুল পাঠদানের অনুমিত দেওয়া হয়েছে। ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব স্কুলের কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। অন্যদিকে গত তিন বছর ধরে অনলাইনে আবেদন ও মনোনয়েন দেওয়ার এসব স্কুল শিক্ষার্থীদের ভাগিয়ে নেওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না। ফলে তাদের দৈন্যদশা দেখা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্কুল ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত করা হচ্ছে। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা সরকারি স্কুলে আবেদন করে থাকে। গুটিকয়েক বেসরকারি স্কুল শিক্ষার্থী পেলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী সংকটে ভোগে। এবছর বেসরকারি স্কুলগুলোতে ১০ লাখ শূন্য আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে মাত্র ২ লাখ ৩৮ হাজার। ফলে ফাঁকা থাকবে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি।
ভর্তি কার্যক্রম শুরুর আগে দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোর কাছে শূন্য আসনের তথ্য চায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। সে আলোকেই ভর্তির জন্য আবেদন চাওয়া হয়। গত ২৪ অক্টোবর বিভিন্ন স্কুলে ভর্তির জন্য প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে অনলাইনে ভর্তি আবেদন গ্রহণ শুরু হয়। ১৪ নভেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের বেসরকারি ৩ হাজার ১৮৮ প্রতিষ্ঠানে আসন শূন্য রয়েছে ১০ লাখ ৪ হাজার। কিন্তু এসব আসনে ভর্তির জন্য আবেদন পড়েছে মাত্র ২ লাখ ৩৮ হাজার। সব শিক্ষার্থী ভর্তির পরও এসব প্রতিষ্ঠানে ৭ লাখ ৭৬ হাজার আবেদন শূন্য থাকবে।
মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবেদনেই বলে দিচ্ছে শিক্ষাতপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এ ছাড়া শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বেড়েছে। কোনো দিক বিবেচনা না করে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়ার ফলেও এমন হতে পারে বলে তাদের মতো।
অনলাইনের আবেদন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা ১১ লাখ ২২ হাজার ৯৯টি। এর মধ্যে সরকারি স্কুলে ১ লাখ ১৮ হাজার ১০৬টি আবেদনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার। সারা দেশের সরকারি ৬৫৮টি স্কুল এই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে প্রতিষ্ঠান ৪১টি।
মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীর নামি-দামি কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য স্কুলে আসনের বিপরীতে এখনো শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। অনেক স্কুলে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েও শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে। আর জেলাপর্যায়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ। সরকারি বিদ্যালয়গুলো ছাড়া অনেক স্কুলে আগামী শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী পাবে হাতে গোনা। এসব প্রতিষ্ঠান বেশির ভাগই এমপিওভুক্ত।
আগামী ২৬ নভেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে লটারির ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক এবং ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন।