চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হতে যাচ্ছে। ওই বৈঠকে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় আলাপ ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
সোমবার (২০ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন ড. মোমেন।
নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনা থাকছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এফওসিতে রাজনৈতিক আলোচনা হবে না। সেখানে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হবে। এ দেশের (বাংলাদেশের) রাজনৈতিক বিষয়গুলো বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় আলাপ ও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন (সেপ্টেম্বরে নয়া দিল্লিতে হাসিনা-মোদির বৈঠকে ইঙ্গিত করেন মন্ত্রী)।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময় ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলন শুরুর আগের দিন গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও একান্ত বৈঠক করেছেন হাসিনা-মোদি।
মোমেন বলেন, বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারত প্রত্যাশা করে, প্রতিবেশী দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। ক্ষমতার পালা বদলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যেন কোনো ভাটা না পড়ে, এটা চায় ভারত। অগতানুগতিক কোনো সরকারের উপস্থিতি আর কখনও যেন না আসে, এটাই ভারতের অবস্থান।
আগামী ২৪ নভেম্বর নয়া দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে যৌথ পরামর্শক সভায় বসবেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে পররাষ্ট্রসচিবের নয়া দিল্লি সফর রাজনৈতিক বিবেচনায় বেশ গুরত্বপূর্ণ। বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্কের সামগ্রিক ইস্যুতে আলোচনা হবে। আশা করা হচ্ছে, মোমেন-কোয়াত্রা বৈঠকে অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর মধ্যে- পানি বণ্টন; বিশেষ করে তিস্তা ইস্যু, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, সীমান্ত ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এর বাইরে রাজনৈতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ আসার সম্ভবনা থাকবে।
সম্প্রতি নয়া দিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। ওই বৈঠকে নয়া দিল্লির পক্ষ থেকে ওয়াশিংটনকে জানানো হয়েছে, নির্বাচন কীভাবে হবে, তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে বাংলাদেশ নিয়ে নয়া দিল্লির অবস্থানের বিষয়ে এখনও খোলামেলা কোনো মন্তব্য করেনি ওয়াশিংটন। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ওয়াশিংটন যে নয়া দিল্লির সঙ্গে একমত নয়, তা ইতোমধ্যে কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারতের এফওসি অনুষ্ঠিত হয়। আট মাসের ব্যবধানে দেশটির সঙ্গে এফওসি করতে যাচ্ছে ঢাকা। এর আগে ভারত ছাড়াও অন্য কোনো দেশের সঙ্গে এত কম সময়ের ব্যবধানে এফওসির নজির বাংলাদেশের ক্ষেত্রে না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে দুটি দেশ প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় এটি করতে পারেন বলে মত সংশ্লিষ্টদের।