রাজধানীতে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হবার পর থেকেই তালা ঝুলছে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে৷ ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশি ব্যারিকেড তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত ১৮ দিনেও নীরবতা ভাঙেনি দেশের প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক এ কার্যালয়ের।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করলেও অর্ধমাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে প্রধান কার্যালয়ের সামনে দেখা যায়নি।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) সকালে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধুলোর আস্তরণ জমে তালাবদ্ধ কার্যালয়ের মধ্যে এখনো পড়ে আছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নামে আসা ইসির চিঠি৷ এছাড়া দলটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ সিনিয়র নেতাদের নামে আসা চিঠিও পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
বুধবার সকাল থেকেই কার্যালয়ের সামনে দু-তিন জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন৷ তবে পাশে ভিক্টোরিয়া হোটেলের গলিতে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য অবস্থান করছেন৷ এছাড়া হোটেল মিডওয়ের সামনে পাহারায় রয়েছেন ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য৷ এছাড়া ফকিরাপুল মোড়ে র্যাবের টহল গাড়ি ও নাইটিংগেল মোড়ে রয়েছে পুলিশের সরব উপস্থিতি।
এছাড়া নয়াপল্টনের সামনের রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও সেটি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক কম। নাইটিংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত রিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার চলাচল করছে। তবে কোনো গণ-পরিবহন চলাচল করতে দেখা যায়নি। এছাড়া বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের কোনো মিছিল বা রাস্তা অবরোধের ঘটানা ঘটেনি।
হারুনুর রশিদ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, ২৮ তারিখের পর থেকেই দেখছি দলটির অফিসে তালা ঝুলছে৷ মনে হচ্ছে কোনো নেতাকর্মী নেই৷ আমার মনে হয়-কেউ এসে একবার দেখেও যায়নি কার্যালয় আছে কি নেই।
তিনি বলেন, সবসময় দেখেছি এখানে হাজারো নেতাকর্মী মিছিল মিটিং করছে৷ আজ কেউ নেই৷ মনে হচ্ছে কার্যালয় ২৮ তারিখের পর ঘুমিয়েছে৷ সে ঘুম এখনো ভাঙেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, আমি প্রতিদিন এখানেই ডিউটি করি৷ বিএনপির কাউকে দেখি না৷ ২৮ তারিখের পর আর কেউ আসে নাই৷ মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক রয়েছে৷ আগে এ রাস্তা দিয়ে যত মানুষ চলাচল করতো এখন তার অর্ধেকও করে না।
দলীয় কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়া বলেন, আমাদের নিরাপত্তা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে৷ রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক আছে৷ মানুষ নিরাপদে তাদের কাজ করছেন।
তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নাশকতার তথ্য বা পুলিশি পাহারা বাড়ানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো এমন তথ্য আমাদের কাছে আসেনি৷ তবে যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামনে এলে আমাদের ফোর্স সেটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রস্তুত আছে।
বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এখন কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সারাদেশে চলছে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের পঞ্চম ধাপের টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ।
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের পর বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো কঠোর কর্মসূচিতে যায়। ওই ঘটনার পরদিন সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে তারা। এরপর শুরু হয় অবরোধ কর্মসূচি।
প্রথম দফায় ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টা ও তৃতীয় দফায় ৮ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। চতুর্থ দফায় ১২ নভেম্বর থেকে একই কর্মসূচি পালন করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আজ থেকে পঞ্চম দফার অবরোধ চলবে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত।