অপেক্ষার প্রহর শেষে চালু হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত খাগড়াছড়ি রামগড় স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন। আগামী মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই ইমিগ্রেশন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন উপলক্ষে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে চিকিৎসা, পর্যটন ও ব্যবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগে নতুন যাত্রা উন্মোচন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সেভেন সিস্টার্স দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে রামগড় ও ত্রিপুরার সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর উদ্যোগ নেয় এই দুই দেশ।
ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরু হলে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানসহ চট্টগ্রামের বাসিন্দারা সহজেই ভারতে যেতে পারবে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে চিকিৎসা, পর্যটন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।
স্থানীয়রা বলছে, চিকিৎসা বা ভ্রমণের জন্য পর্যটকরা এই পথকে সহজেই ব্যবহার করতে পারবে। এ সরকার আমাদের এই সুযোগটা করে দেওয়ার জন্য আজকে আমরা সাবাই উপকৃত হচ্ছি।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে এই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ চলবে। স্থলবন্দর চালুর লক্ষে রামগড়ে মহামুনি এলাকায় ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে একটি সেতু নির্মাণ করেছে ভারত সরকার।
রামগড় স্থলবন্দর প্রকল্প পরিচালক সারোয়ার আলম বলেন, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগড় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ভবনের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যে রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালুর লক্ষ্যে টার্মিনাল শেড, ব্যাংক, কাস্টমস, বিজিবি ও পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
সম্ভাবনাময় এই বন্দরে সকল সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে দ্রুত আমদানি রফতানি কার্যক্রম চালুর দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
রামগড় স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক জানায়, যাত্রী পারাপারে প্রস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থলবন্দর রামগড়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাব্রুম সাথে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ দিয়ে ইমিগ্রেশন চালু হওয়ার কথা হয়েছে দুই দেশের। ইতোমধ্যে কার্যক্রম পরিচালনায় সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো।
রামগড় পৌরসভা মেয়র রফিকুল আলম কামাল বলেন, ইমিগ্রেশন চালুর পর দ্রুত আমদানি রফতানি কার্যক্রম চালু হলে উপকৃত হবে দুই দেশ।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, ইমিগ্রেশনের পাশাপাশি বন্দর চালু হয় খাগড়াছড়ি জেলাবাসী ও চম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে দাবি করছি।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী বলেন, ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালু হতে যাচ্ছে। উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানায় প্রধানমন্ত্রীকে। চালু হলে এই পাড়ের মানুষ চিকিৎসার জন্য যায় তাদের জন্য যাতায়াতের জন্য সুবিধা হবে। পাশাপাশি অনেক ব্যবসা উম্মোচন হবে। এই এলাকায় বেকাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কংজরী চৌধুরী বলেন, রামগড় স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে সীমান্তকুল ঘেঁষা ফেনী নদীর ওপর ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ চালু হয় ২০২১ সালের মার্চে। এই বন্দর চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে কম খরচে দ্রুত সময়ের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি করা যাবে ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে।
জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, দুই দেশের ভেতর বিশেষ করে ভারতের সেভেন সিস্টার্স এবং আমাদের পার্বত্য এলাকায় ব্যাপক বাণিজ্য সম্ভাবনা সৃষ্টি উন্মোচন হবে এবং এলাকার জনজীবনে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
রামগড়ে স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন চালু লক্ষ্যে ৮৩ কোটি রূপি ব্যয়ে ২০২১ সালে ফেনী নদীর উপর নির্মিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করেন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।