চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়ার জেরে কর্মবিরতি শুরু করেছে হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনার পর বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের কোনো ওয়ার্ডে কাজে যোগ দেননি তারা। এ নিয়ে দুপুর ১২টায় চমেক হাসপাতালের পরিচালকের সভাকক্ষে বৈঠকে বসেন হাসপাতাল ও চমেক কর্তৃপক্ষ, পুলিশ প্রশাসন এবং দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা। কিন্তু দুই ঘণ্টার বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি। হামলাকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। এ কর্মবিরতির কারণে চমেক হাসপাতালে রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চমেক ক্যাম্পাসে অবস্থিত ক্যাফেটেরিয়া থেকে মঙ্গলবার রাতে বের হওয়ার সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী রাহাতকে ‘মোটু’ বলে ব্যঙ্গ করে। এ নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি পরে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা এ সংঘর্ষ চলে। এতে তিন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও তিন ছাত্রসহ ৬ জন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাত ৯টায় ফের দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় সাবেক ছাত্রনেতা ফজলে সুজনের নেতৃত্বে শোডাউন করে নওফেল অনুসারীরা। পুলিশের উপস্থিতিতে লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করেন তারা।
চমেক হাসপাতাল ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. ওসমান ফরহাদ যুগান্তরকে বলেন, চমেকের ছাত্র না হয়েও বহিরাগতরা কমান্ডো স্টাইলে ক্যাম্পাসে ঢুকে মিছিল করেছে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন ব্যানার ছিঁড়েছে সাবেক ছাত্রনেতা ফজলে সুজন। এ নিয়ে ফেসবুকেও লাইভ করেছেন তিনি। মূলত আমাদের এক ব্যাচমেটকে গালাগাল করায় আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। এর মধ্যেই নওফেলের অনুসারীরা বহিরাগতদের নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আমিসহ তিন চিকিৎসক ও চমেকের তিন ছাত্র আহত হয়েছেন।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে চমেক ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদারের ব্যপারে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বহিরাগত কেউ চমেক হোস্টেলে যেন অবস্থান করতে না পারে সেজন্য ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আইডি কার্ড রাখতে বলা হয়েছে। আশা করছি বৃহস্পতিবার থেকে তারা সেবাদানে ফিরবেন।
চমেক ছাত্রলীগের বিবদমান দুপক্ষের মধ্যে একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আরেক পক্ষ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসাবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে চমেকে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন আ জ ম নাছির উদ্দীন অনুসারীরা। বিগত প্রায় ৮-১০ বছর ধরে ক্যাম্পাসে স্থিতিশীল পরিস্থিত বজায় থাকলেও সাম্প্রতিক নওফেল অনুসারীরা ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করছেন।