দ্বিতীয় দিনের মতো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ফলে চাইলে কেউ রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না। যার কারণে বিএনপির দৈনন্দিন কার্যক্রম থমকে গেছে। অফিস স্টাফদের মধ্যে যারা কার্যালয়ের পাঁচ তলায় আবাসিকভাবে বসবাস করতেন তাদের এখন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, রোববারের মতো আজও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে চারদিকে বাঁশ দিয়ে ‘ক্রাইম সিন’ লেখা ফিতা টানানো রয়েছে। তাতে আরও লেখা আছে, ‘ডু নট ক্রস’। কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে ঝুলছে তালা। আর কার্যালয়ের আশপাশে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশসহ সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ফলে ওই অংশ দিয়ে কেউ যাতায়াত করতে পারছেন না। সড়কের ওই অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচলের জায়গাও সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৮ তারিখের মহাসমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তো কিছু হয়নি। তাহলে কেন সেখানে ক্রাইম সিন দিয়ে ঘেরাও করে রাখা হবে? পুলিশ নিজেই হামলা করল আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর। এখন আবার আমাদের কার্যালয় তারাই ঘেরাও করে রেখেছে।
তিনি বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ভাঙচুর করা হচ্ছে। নেতাদের না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করা হচ্ছে। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের আটক করা হচ্ছে। অন্যদিকে দলের কার্যালয় পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রাখছে। এ অবস্থায় স্বাভাবিকভাবে আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়া পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটক ঘেরাও করে রেখেছে সিআইডি। তারা কবে এই ঘেরাও তুলে নেবে তা আমরা বলতে পারব না। গতকাল (রোববার) সিআইডি কিছু আলামত সংগ্রহ করে নিয়েছে, এটাই জানি। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি কার্যালয় কার্যত বন্ধই থাকবে।
অন্যদিনের মতো আজও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি আশপাশের সড়কেও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এদিকে, শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে ৬০টির মতো সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। সোমবার সকালে দেখা যায়, বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কের ডিভাইডারে ল্যাম্পপোস্টের খুঁটিতে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছিলেন দুই যুবক।
গত শনিবার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এসময় হামলার ঘটনায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে একজন পুলিশ সদস্যসহ দুজন নিহত হন। তার প্রতিবাদে বিএনপি রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে। এদিন রাজধানীর মোহাম্মদপুর ক্ষমতাসীন দলের হামলায় স্থানীয় বিএনপির এক নেতা মারা গেছেন বলেও অভিযোগ করেছে দলটি। আজ সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিএনপির কোনো কর্মসূচি না থাকলেও মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।
অন্যদিকে, পুলিশ হত্যা, হামলা, বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে রোববার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।