পারিশ্রমিক সংক্রান্ত এক মহা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। কিন্তু মাঠে নামবে কী, তার আগে যে ঘরের আগুনে পুড়ছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট! বৃহস্পতিবার থেকে পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামেই শুরু হবে বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্ট। এর আগে লঙ্কান বোর্ডের পক্ষ থেকে তাদের ক্রিকেটারদের আহ্বান করা হয়েছে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য। কিন্তু ক্রিকেটাররা অস্বীকৃতি জানিয়েছে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করা থেকে।
কারণ, নতুন চুক্তিত ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক কমিয়ে দেয়া হয়েছে ২০০ ভাগ। যে কারণে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে গত জানুয়ারি থেকেই দ্বন্দ্ব চলমান ক্রিকেটারদের। কারণ, গত জানুয়ারি থেকেই কেন্দ্রীয় চুক্তিবিহীন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা। বোর্ডের সঙ্গে পারিশ্রমিক সম্পর্কিত তাদের এই দ্বন্দ্ব দেশটির ক্রিকেটকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন শ্রীলঙ্কান বিশেষজ্ঞরা।
খেলোয়াড়রা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি নয়, কারণ তারা তাদের পারিশ্রমিকের বিশাল একেটি অংশ হারাতে যাচ্ছেন। আবার শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড তাদের প্রস্তাবেই অনড়। কেউ ছাড় দিতে বিন্দু পরিমাণ রাজি নয়।
লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের পুরনো চুক্তি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ক্যাটাগরির ক্রিকেটাররা পারিশ্রমিক পেতেন ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার। কিন্তু নতুন চুক্তিতে সেটা নামিয়ে আনা হয়েছে কেবল ৪৫ হাজার ডলারে। ২০০ ভাগেরও বেশি কমিয়ে ফেলা হয়েছে পারিশ্রমিক। একই সঙ্গে পে প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে সিনয়রিটির ভিত্তিতে।
যেমন, ২০ টেস্টের বেশি যারা খেলেছে, তারা পাবে অতিরিক্ত ৫০০ ডলার। ৪০ টেস্টের বেশি যারা খেলেছে তারা পাবে ৭৫০ ডলার। ৬০ টেস্টের বেশি যারা খেলেছে তারা পাবে ১ হাজার ডলার। এছাড়া কোনো ক্রিকেটার যদি ৮০ কিংবার তার বেশি টেস্ট খেলে থাকে, তাহলে তার জন্য বোনাস ২ হাজার ডলার। এছাড়া আর কোনো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে না। পুরোপুরি বন্ধ। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ডের এই প্রস্তাবের কারণেই মূলতঃ ক্ষুব্ধ সে দেশের ক্রিকেটাররা।
যদি প্রথম ক্যাটাগরিতে থাকা কোনো ক্রিকেটারের ১ লাখ ডলার কমিয়ে ফেলা হয়, যেমন সুরাঙ্গা লাকমাল, যিনি খেলেন শুধু টেস্ট ক্রিকেট। তার ৪৫ হাজারের বেশি পাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। কারণ, পয়েন্ট সিস্টেম। শ্রীলঙ্কা বোর্ড পয়েন্টের ওপর ভিত্তি করেই পারিশ্রমিক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে তিন ফরম্যাটে যারা খেলেন, তাদের খানিকটা বেশি পাওয়ার সুযোগ। যারা শুধু এক ফরম্যাটে খেলেন, তারা পুরোপুরি বঞ্চিতই বলা যায়।
সুরাঙ্গা লাকমাল গত দুই বছর টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে যাচ্ছেন। কিন্তু যে চুক্তির আওতায় তাকে আনা হচ্ছে, তাতে তিনি কিংবা তার মত আরও ক্রিকেটার যদি বলেন, ‘আমি আর খেলবো না। বরং তার চেয়ে কাউন্টিতে কোনো একেটি ক্লাবের সঙ্গে যদি চুক্তি করি, তাহলে দেখা যাচ্ছে মৌসুম প্রতি আমি পাবো ১ লাখ পাউন্ড। যা শ্রীলঙ্কায় তার পারিশ্রমিকের চেয়ে চারগুণ বেশি’- তখন কী অবস্থা দাঁড়াবে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে?
বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সিরিজ শুরুর আগে এক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে এই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেন দেশটির ডিরেক্টর অব ক্রিকেট টম মুডি। এ নিয়ে এক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যদিও টম চুক্তির বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট অনেকগুলো পয়েন্ট কোনোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এতে বোঝা যাচ্ছে, এই প্রস্তাবগুলো টম তৈরি করেননি। পেছন থেকে অন্য কেউ কলকাঠি নাড়ছে।’