দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময়ের জন্য বিএনপিকে ডাকা হলেও তারা আসেননি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘বিএনপিকে চায়ের দাওয়াত দিয়েও, আনতে পারিনি। তারা আমাদের আস্থায় নিচ্ছেন না। আমাদের মানেন না।’
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই মতনিবিময় সভার আয়োজন করা হয়। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসন এই সভার আয়োজন করে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিল। তখন ৩৯টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৭টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছিল। বিএনপিসহ ১২ দল সেই সংলাপের আমন্ত্রণ নাকচ করেছিল। কয়েক মাস আগে আলোচনা ও মতবিনিময়ের জন্য বিএনপিকে আবারও চিঠি দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
চিঠিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলীয় অন্য নেতা এবং প্রয়োজনে সমমনা দলগুলোর নেতাসহ আমন্ত্রণ জানানো হলেও দলটির কোনো নেতা যাননি।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ইসি আনিছুর রহমান বলেন, ‘সবশেষ এপ্রিল মাসে বিএনপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে আমরা আসতে বলেছিলাম। কিন্তু তারা আসেননি। বিএনপি আমাদের আস্থায় নিচ্ছেন না। আমাদের মানেন না। উনারা আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন না। এরপর আর কিছু বলার থাকে না। আমরাতো তাদেরকে জোর করে আনতে পারব না। আমরা আমাদের কর্তব্য যেটুকু এরমধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই। এর বাইরে রাজনৈতিক বিষয় আমাদের না। রাজনৈতিক বিষয় রাজনীতিবিদরাই সমাধান করবেন। কীভাবে সমাধান করবেন, সেটা তাদের বিষয়। তাদের মাঝে আমরা ঢুকবও না।’
এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে এখনো কোনো কিছু বলতে পারছি না। তাদের সঙ্গে বসব কী বসব না তফসিল ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নেব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছি তখন তাদের জানানোর প্রয়োজন হবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে ইসি আনিছুর বলেন, প্রার্থী ভোটের দিন যে কোনো কেন্দ্রেই যেতে পারবেন। এতে কোনো বাধা নেই। তবে নিরাপত্তার খাতিরে আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়ে যাওয়া উত্তম। এতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে পারবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার না আসার মতো কোনো পরিবেশ আমাদের সময়ে এখনো সৃষ্টি হয়নি। প্রার্থী ও তাদের প্রতিনিধিরা যত বেশি ভোটারদের কাছে যাবে ভোট দিতে ভোটাররাও ততবেশি আগ্রহ প্রকাশ করবেন। এরচেয়ে বেশি সহায়তা হয় ডিসি ও এসপি যদি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ডেকে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। আর জনগণের কথা আমি কী বলব। আমাদের কাজ আমরা করছি। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর পরামর্শ দেন।
জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাংগীর আলম, লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, কুমিল্লা নির্বাচন কার্যালয়ের আঞ্চলিক কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন, লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শফিকুর রহমান ও লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া।
উল্লেখ্য, গত ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল মারা যান। ৪ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। একইসঙ্গে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ নভেম্বর আসনটির ১১৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ আসনে ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৪৪ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্য ২ লাখ ৯ হাজার ৯৬ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৮ জন নারী ভোটার।