চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যসহ ১৩ আসামিকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, গরু লুটপাট ও ডাকাতির মামলায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (২২ অক্টোবর) সকালে ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু ও ইউপি সদস্য নুরুল ইসলামসহ ১৩ আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ন কবীর এই আদেশ দেন।
এক বিবাহ বিচ্ছেদকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের একটি কক্ষে বাবা ও ছেলেকে আটকে রেখে হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখানোর পর বাড়িতে লুটপাট করার অভিযোগে এই মামলা দায়ের করা হয়। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন, বাদির আইনজীবী অ্যাড. মো. নূরে আলম সিদ্দিকী আসাদ।
জানা যায়, মামলায় প্রধান আসামি গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু। দ্বিতীয় আসামি গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড সদস্য মো. নুরুল ইসলাম। বাকি আসামিরা হলেন- গোবরাতলা ইউনিয়নের মুনসেফপুর গ্রামের মৃত আলতাস আলীর ছেলে মোহাম্মদ ইব্রাহিম আলী, মো. হবু আলী, শারিফ আলি, মৃত সদর আলীর ছেলে মো. ফারুক আলী, মোহাম্মদ ওসমান আলী, মৃত মফিজুল ইসলামের ছেলে আলী আহসান, মৃত দাউদ আলীর ছেলে ইউনুস আলী, হবু আলীর ছেলে আহাদ আলী, মৃত সদর আলীর মেয়ে মোছা. মোসলেমা, মোছা. রোকেয়া বেগম, ইউনুস আলীর স্ত্রী মিলি বেগম।
মামলার সূত্রে জানা যায়, মামলার বাদী শাহ জামালের ছেলে জসিম উদ্দিনের সঙ্গে ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের মুনসেফপুর গ্রামের মোসলেমা খাতুনের। পারিবারিক বনিবনা না হওয়ায় সংসার জীবনের এক বছর পর ২০২২ সালের ৩১ মে তালাক দেন জসিম উদ্দিন। তালাক নিষ্পত্তি করতে ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম টিপু ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে সালিশের আয়োজন করে। এ সময় বউ তালাক দেওয়ায় জসিমের কাছে ২ লাখ টাকা ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউপি চেয়ারম্যান টিপু।
বাদীপক্ষের অভিযোগ, সালিশে অতিরিক্ত জরিমানা হওয়ায় দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয় জসিম ও তার বাবা শাহ জামালকে। পরে ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে সাক্ষর দিতে না চাইলে অবশেষে তাদেরকে ছেড়ে দেন চেয়ারম্যান টিপু। পরবর্তীতে ২৫ জুলাই ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের নির্দেশে অন্য আসামিরা শাহ জামালের বাড়িতে হামলা করে।
মামলার বাদী শাহ জামাল বলেন, লুটপাটের সময় তারা ঘরের দরজায় তালা মেরে বাড়ির উঠানে থাকা দুইটি গরু নিয়ে যায়। গরু দুটির মূল্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়াও ছেলের বউ জেসমিন আখতারের গলায়, কানে থাকা দশ আনা স্বর্ণের মালা ও ছয় আনা ওজনের দুইটি কানের দুল ছিনিয়ে নেয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৫০ হাজার টাকা। এমনকি দুটি স্মার্টফোন ও বিছানার নিচে থাকা ৪৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নানারকম ভয়ভীতি দেখায় তারা।
বাদীর আইনজীবী অ্যাড. মো. নূরে আলম সিদ্দিকী আসাদ জানান, চলতি বছরের ৭ আগস্ট আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করে। রোববার আদালতে হাজির হয়ে ১৩ আসামি জামিন আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।