দূর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে প্রকাশ পেলো প্রতিভাবান শিল্পী সাহস মোস্তাফিজের ভিন্নধর্মী গান ‘নিরঞ্জনের গল্প’। গানটি মূলত ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। আজব রেকর্ডসের পরিবেশনায় এই গানের সংগীতায়োজন করেছেন রফিকুল ইসলাম ফরহাদ।
নিরঞ্জন কে? প্রশ্ন করতেই সাহস পরিচয় করিয়ে দিলেন নিরঞ্জনের সাথে। ‘নিরঞ্জন একটি কল্পিত চরিত্র। তবে ২০২১ সালের একটি ঘটনার সাথে এই চরিত্রটি মিলে যায়। ওই বছর দুর্গাপূজার সময় ধর্মীয় সহিংসতায় সারাদেশে বেশ কিছু নিন্দনীয় ঘটনা ঘটে, যা বাঙালি জাতীয়তাবোধকে করুণভাবে নাড়া দেয়। ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং সহিংসতা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য কাম্য নয়। এই গানে নিরঞ্জন নামের একটি রূপক চরিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের শান্তিকামী মানুষের প্রাণের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।’
২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত সহিংসতা বিরোধী কনসার্টে নিজের লেখা ও সুর করা এই গানটি প্রথম গেয়েছিলেন শিল্পী সাহস। ওই দিনই গানটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। গানটি লেখা হয়েছিল কনসার্টের ঠিক আগের রাতে, যেমনটি গানের শুরুতে লেখা হয়েছে— ‘কাল রাতে একটি গান লিখতে বসেছিলাম আজকের এই মঞ্চে গাইবো বলে…!’
গানটি আজব রেকর্ডসের ইউটিউব ও ফেসবুক চ্যানেল, অ্যাপল মিউজিক, স্পটিফাই, স্বাধীনসহ সব জনপ্রিয় মিউজিক স্ট্রিমিং অ্যাপে শোনা যাচ্ছে। এর আগে বাপ্পা মজুমদারের সংগীতায়োজনে সাহসের গাওয়া গান ‘স্বপ্নের বিবর্তন’ বেশ প্রশংসিত হয়।
সাহস দীর্ঘদিন ধরে গানের জগতে সুনাম কুড়িয়ে যাচ্ছেন। গান গাওয়ার পাশাপাশি গান লেখা ও সুর করার ক্ষেত্রেও তার সমান পারদর্শীতা। ভাওয়াইয়া গানে শিশুকাল থেকেই তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। অর্জন করেন বেশ কিছু জাতীয় পুরষ্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ঢাবি সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন ও গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন গানের চর্চা।
নিরঞ্জন কিংবা স্বপ্নের বিবর্তন অন্য গানের থেকে একটু ভিন্ন স্বাদের। এই গান দুটিতে সাহস গল্প বলার চেষ্টা করেছেন। সাহস বলেন, ‘আমি পেশায় কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট এবং সংগীত পরিবারের সন্তান। আমি জানি, সঠিকভাবে একটি গল্প বলতে পারলে অনেক কঠিন কথা সহজে বলা হয়ে যায়। তাই আমি গান লেখার ক্ষেত্রে গল্প বলার ঢংটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। এতে করে শ্রোতার মনে গানের পরিস্থিতিটা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।’
গানটির প্রযোজক শিল্পী জয় শাহরিয়ার বলেন, ‘গান এমন একটি শিল্প মাধ্যম, যা দিয়ে সমাজের অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরা সম্ভব। নিরঞ্জন সাহসের অন্যতম সেরা একটি সৃষ্টি। ও গানে গানে ঘুনে ধরা সমাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা চাই, এই গান শুনে মানুষ নিজের ভাই হারানোর বেদনা অনুভব করুক। সকল সহিংসতার পথ থেকে সরে আসুক।’ গানটির সংগীতায়োজক রফিকুল ইসলাম ফরহাদ বললেন, ‘আমার মনে হয়েছে এই গান শুনে অনেকেই দেশ ও সমাজের জন্য ভিন্ন দৃষ্টি নিয়ে কাজ করবে।’
বাংলাদেশ যখন আর একবার হিন্দু ধর্মীয় সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপূজা উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই ধর্মীয় সহিংসতার বিরুদ্ধে গানটি প্রকাশ করলেন সাহস। গানের মধ্য দিয়েই মানুষের বিবেককে নাড়া দিতে চান এই শিল্পী। গানে গানেই তাই তিনি বললেন, দেশটা জুড়ে আগুন খেলার এই যেন হয় শেষ।