কথায় আছে, ‘ন্যাড়া বেল তলায় একবারই যায়’। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে অবশ্য তা সত্যি নয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চারবার সেমিফাইনাল খেললেও একবারও ফাইনালে ওঠতে পারেনি দলটি। এ কারণে তো ‘চোকার’ তকমাই পেয়েছে প্রোটিয়ারা। আর এবার ঘুরেফিরে পুরোনো এক অভিজ্ঞতারই মুখোমুখি হতে হয়েছে বড় মঞ্চে এসে।
গত বছর অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরাজিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ডাচদের বিপক্ষে সেই হারের কারণে সেমিফাইনাল খেলা হয়নি প্রোটিয়াদের। এরপর আবার বড় মঞ্চে মুখোমুখি হয়েছে দলটি। ভারতের মাটিতে অনূষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে গতকাল ডাচদের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল এবারের আসরে দুর্দন্দ প্রতাপে থাকা টেণ্ডা বাভুমার দল।
এবারের আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রান পাহড় গড়ে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর অস্ট্রেলিয়াও হালে পানি পায়নি প্রোটিয়াদের বিপক্ষে। তাই ধারণা করা হয়েছিল, টী-টোয়েন্টিতে ডাচদের বিপক্ষে হারলেও একদিনের ক্রিকেটে ঠিকই জয় তুলে নেবে চারবারের সেমিফাইনালিস্টরা।
তবে ধারণা কি আর সবসময় সত্যি হয়? গতকাল ঠিকই ডাচ রূপকথার জন্ম দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় তুলে নিয়েছে নেদারল্যান্ডস। ফিরিয়ে এনেছে বড় মঞ্চে প্রোটিয়াদের হারানোর স্মৃতি। আর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চারবারের সেমিফাইনালিস্টদের হারানোতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন উবার ইটসে একসময় ডেলিভারিম্যান হিসেবে কাজ করা ডাচ ক্রিকেটার পল ভ্যান ম্যাকারিন।
গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমাবারের মত কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে জয় পেয়েছে নেদারল্যান্ডস। ইতিহাস গড়া এই জয়ের পথে ম্যাকারিন নিজে বল হাতে ৯ ওভার বোলিং করে ৪০ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। দলের এমন জয়ের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে ম্যাকারিনের পুরনো এক পোস্ট।
বছর তিনেক আগেও জীবনটা অন্যরকম ছিল ম্যাকারিনের। খুব একটা ক্রিকেট খেলার সুযোগ না থাকায় জীবন এবং জীবীকার প্রয়োজনে সে সময় উবার ইটসে খাবার ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। সে সময় টুইটারের করা এক পোস্টে ম্যাকারিন লিখেছিলেন, ‘আজকের দিনটায় ক্রিকেট খেলার কথা ছিল। কিন্তু শীতের সময়টা পার করার জন্য আমি এখন উবারে খাবার ডেলিভারি করছি। কীভাবে সময় পাল্টায়! তবু মুখের হাসিটা ধরে রাখুন।’
ম্যাকারিনের এমন পোস্ট করার কারণ ছিল করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালে আয়োজিত হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পিছিয়ে যাওয়া। সে সময় ক্রিকেট খেলে আয় করার সুযোগ না থাকায় উবারের কাজ নেন ম্যাকারিন। ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা থেকেই অন্য কোনো চাকরিতে যোগ দেননি তিনি।
কোনো ক্লাব থেকে খেলার ডাক আসলেই যেন যেতে পারেন সে কারণেই চাকরি নেন উবারের ডেলিভারি ম্যানের। ইসপিএন ক্রিক্রিনফোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি হল্যান্ডে থাকি না। যে কারণে আমি ডাচ ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তিতে নেই। চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে আপনাকে সেখানে থাকতে হবে। কাউন্টি চুক্তিটাও তখন নেই, তাই ক্রিকেট থেকে আমার কোনো আয় ছিল না। নতুন আয়ের ক্ষেত্র খুঁজছিলাম। চাকরিও করতে চেয়েছি আবার ক্লাব ও দেশ ডাকলে যেন যেতে পারি, সেটাও চেয়েছি। তাই সব মিলিয়ে উবার ও ডেলিভারিতে কাজ করেছি। কারণ, এখানে অ্যাপ খুলেই কাজ শুরু করা যায়। আমি রেস্তোরাঁ বা পানশালায় আটকে থাকতে চাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড আমাকে দেখিয়েছে ক্রিকেটের বাইরেও দুনিয়ায় অনেক কিছু আছে। শীতের সময়টা কাটাতে আমাকে লড়াই করতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দিন শেষ এটা আমাকে ভালো মানুষ ও ক্রিকেটার বানিয়েছে।’
ম্যাকারিনের মত ক্রিকেটারদের কারণেই বিশ্বকাপের মত মঞ্চে এসে রূপকথার জন্ম দিতে পেরেছে নেদারল্যান্ডস। এভাবেই এক সময় হয়তো বিশ্ব ক্রিকেটে শাসন করবে ডাচরা।