শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চার ছাত্রলীগ নেতাসহ ১১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সুপারিশ করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে ১ জনকে স্থায়ী ও বাকি ১০ জনের ছাত্রত্ব সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজনকে হল থেকে বহিষ্কার ও সতর্ক করতে বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগকেও সতর্ক করেছে শৃঙ্খলা কমিটি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে শৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সদস্য এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদের মধ্যে স্থায়ী বহিষ্কৃত হলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহ। তিনি ইতোমধ্যে বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন।
সাময়িক বহিষ্কৃত চারজন ছাত্রলীগ নেতা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির বহিস্কৃত সহ-সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান, আইবিএ ছাত্রলীগের সভাপতি আবু সিনহা।
এছাড়া ২০২১-২২ সালের ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ইয়াসির আরাফাত, নজরুল, মাহিন, শাফিউল্লাহ, আলিফ ও শিশিরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা অপরাধের শাস্তির বিষয়টি নির্ধারিত হয় শৃঙ্খলা কমিটির সভায়। প্রতি ছয় মাসে অন্তত একবার এই কমিটির সভা হওয়ার কথা। পদাধিকারবলে শৃঙ্খলা কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ভিসিএবং সদস্যসচিবের দায়িত্বে থাকেন প্রক্টর। তবে গত ১৪ বছরে সভা হয়েছে মাত্র দুটি। সবশেষ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে চলতি বছরের গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে মারধর ও ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতার ছাত্রত্ব সাময়িক বহিষ্কার করেছে শৃঙ্খলা কমিটি।
সেইসঙ্গে অনাবাসিক শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদেরকে দ্রুত হল থেকে অপসারণ করার সুপারিশ করা হয়। বহিষ্কৃত এই দুই নেতা হলেন ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান।
২০২২ সালের জুনে আইন বিভাগের এক শিক্ষিকার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠে একই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আশিকুল্লাহর বিরুদ্ধে।
ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে সেই অভিযোগেই তাকে আজ স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আইবিএ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আবু সিনহাকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
এছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত হাসিবুল ইসলাম শান্তকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকজনকে সতর্ক করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, দীর্ঘদিন পর আজকে শৃঙ্খলা কমিটির সভা হয়েছে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী কারো আবাসিকতা বাতিল, সাময়িক ছাত্রত্ব বাতিল ও সতর্ক করার সুপারিশ করা হয়েছে৷ আগামী সিন্ডিকেট সভার পর বিস্তারিত জানানো হবে।