অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের সম্প্রসারণ ঘটবে বলে হুমকি দিয়েছে ইরান। সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান এই হুমকি দিয়েছেন।
ইরানের শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেছেন, ইরান নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে এই পরিস্থিতি দেখতে পারে না। লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি ঘণ্টায় একটি নতুন যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের মাঝে কাতার সফরে গেছেন হোসাইন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। সেখানে কাতারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর সাথে বৈঠক করেছেন তিনি।
ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ বলছে, গাজায় ‘ত্রাণ সামগ্রী’ পাঠানো এবং গাজা সীমান্তের কাছে মিসরে একটি ফিল্ড হাসপাতাল চালুর বিষয়ে ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে আলোচনা করছে ইরান।
একই দিন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মাঝে চলমান যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েছে এবং এ জন্য ওয়াশিংটনকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ইরান। তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
হামাসের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি জোরদার করেছে ওয়াশিংটন। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ ওই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যদি জড়িয়ে যায়, তাহলে তেহরানও যোগ দেবে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নাসের কানানি বলেন, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে সামরিকভাবে জড়িয়ে গেছে বলে ইরান মনে করে।
তিনি বলেন, ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর অপরাধ যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সংঘটিত হচ্ছে এবং ওয়াশিংটনকে অবশ্যই এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
এর আগে, রোববার দোহায় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যদি গাজায় ইসরায়েলি সেনারা প্রবেশ করে তাহলে গাজাকে দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের সমাধিস্থলে পরিণত করবে হামাসের প্রতিরোধ যোদ্ধারা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক অ্যান্টনি ব্লিনকেন গত চার দিন ধরে মধ্যপ্রাচ্য চষে বেড়াচ্ছেন। হামাসের সাথে ইসরায়েলে যুদ্ধ শুরুর পর সফরে বেরিয়ে তিনি আরব বিশ্বের ছয় দেশ জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং মিসর সফর করেছেন।
তার এই সফরের উদ্দেশ্য গাজার বেসামরিক নাগরিকদের কীভাবে সর্বোত্তম মানবিক সহায়তা এবং বিদেশি নাগরিকদের চলে যেতে দেওয়া যায় সেই বিষয়ে আরব বিশ্বের চিন্তা-ভাবনা শোনা, জানা এবং আলোচনা করা।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি এই অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বার্তা জানিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সাজানো হয়। সেই বার্তাটি হল, হামাসের প্রতি ইরানের সমর্থনে বাধা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন ধরে ইরান অর্থ এবং অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র্র ইরানের এই সহায়তা ঠেকাতে চায়।
ইরানের আঞ্চলিক মিত্র হিজবুল্লাহকে লেবানন থেকে ইসরায়েলের উত্তর দিকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখাও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মার্কিন বিমানবাহী দুটি রণতরীর উপস্থিতিতে পরিষ্কার। এছাড়া উত্তেজনা প্রশমনে মার্কিন কৌশলের আরেকটি অংশ হল ইসরায়েলের প্রতি সংযমের আহ্বান জানানো।
আরব বিশ্বের ছয় দেশ সফরের বিষয়ে জানাতে ইসরায়েলে পুনরায় ফিরে এসেছেন অ্যান্টনি ব্লিনকেন। এর মাধ্যমে ইসরায়েল যেভাবে গাজায় হামাসকে ধ্বংস করতে চাইছে— বিশেষ করে বেসামরিকদের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণে এই অঞ্চল কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে সেই বিষয়ে নেতানিয়াহু প্রশাসনকে ধারণা দেবেন তিনি।