মাদারীপুরে মদ্যপানে দুই তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় মৃত সাগরিকা আহমেদের সাবেক স্বামীসহ আটক ৫ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে। সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে গ্রেপ্তারকৃতদের জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করা হলে আদালতের বিচারক কে এম আলমগীর হোসাইন দুই আসামির জামিন মঞ্জুর করেন।
এ সময় মৃত সাগরিকার মা ও মামাসহ অপর তিন আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এর আগে রোববার রাতে এ ঘটনায় মাদারীপুর সদর মডেল থানায় বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন মৃত পারুল আক্তারের বাবা আব্বাস ব্যাপারী। পুলিশ মামলার আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করে। পরে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৫৪ ধারায় আদালতে হাজির করা হয়।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন, নাটরের লালপুরের পোকগা গ্রামের মৃত মন্নান মন্ডলের মেয়ে ও মৃত সাগরিকার মা সাবিনা ইয়াসমিন পান্না (৪০) ও তার মামা তোফাজ্জেল হোসেন বাবু (৩৫), মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাঘুরিয়া গ্রামের ইয়াদ আলী মাতুব্বরের স্ত্রী ও মৃত পারুলের মা ডালিয়া বেগম (৪৫)। এছাড়া এ ঘটনায় আটক মৃত সাগরিকার সাবেক স্বামী ও মাদারীপুর পৌরসভাধীন আমিরাবাদ এলাকার মফেজ বয়াতীর ছেলে ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বয়াতী (৪৪) ও কলেজ রোড এলাকার হাসান সরদারের ছেলে ও ভাড়া বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদারকে (৪৭) জামিন দেন আদালত।
মৃত দুজন হলেন, শহরের উকিলপাড়া এলাকার কেএইচ শাকিল আমম্মেদ সাগরের মেয়ে সাগরিকা আহমেদ (২০) ও নতুন মাদারীপুর গ্রামের আব্বাস ব্যাপারীর মেয়ে পারুল আক্তার ওরফে উর্মি (২৫)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকার লুৎফর রহমান মোল্লা বাসার চতুর্থ তলার একটি ফ্লাট ভাড়া নেয় সাগরিকা আহমেদ নামে এক তরুণী। সাগরিকার সঙ্গে তার মা সাবিনা ইয়াসমিন ও মামা তোফাজ্জেল হোসেন বাবু থাকতেন। শনিবার রাতে সাগরিকার বান্ধবী পারুল তার মা ডালিয়া তাদের বাসায় যান। পরে সবাই মিলে মদ পান ও নাচ-গান করে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আড়াইটার দিকে ঘরের ভেতরেই অসুস্থ হয়ে মারা যান সাগরিকা। এ সময় গুরুতর অসুস্থ হয় আরও চার জন। বিষয়টি টের পেয়ে ওই বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদার ও আরও দুই প্রতিবেশির সহযোগিতায় ওই কক্ষে গিয়ে সাগরিকা ও তার মা, মামা ও বন্ধবী পারুলকে উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের নিয়ে যায়। পরে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পারুল মারা যান। আর সাগরিকার মা, মামাসহ তিনজন চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হলে পুলিশ তাদের। এ ঘটনায় রোববার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাগরিকার সাবেক স্বামী ব্যবসায়ী মজিবুর রহমান বয়াতী ও বাসার কেয়ারটেকার হেলাল সরদারকেও আটক করে পুলিশ।
নিহত সাগরিকার সাবেক স্বামী মজিবুর রহমান বয়াতী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২০ সালের পর থেকে সাগরিকার সঙ্গে আমার মিল না থাকায় কোনো যোগাযোগও ছিল না। তিন মাস আগে আমার সঙ্গে সাগরিকার বিচ্ছেদ হয়। ওর মারা যাওয়ার ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। পুলিশকে আমি সবই বলেছি। তবুও আমাকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে।
তবে সাগরিকার বোন লামিয়া আক্তার মোবাইল ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার বোন (সাগরিকা) এভাবে মারা যেতে পারে না। ওরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মদের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে ওরে খাওয়ানো হতে পারে। আমি এ ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানাই।
এ সম্পর্কে মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘দুই তরুণী মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক ৫ জনকে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হয়। পরে আদালত দুজনকে জামিন মঞ্জুর করেন ও অপর তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশনা দেন। নিহত ওই দুই তরুণীর ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হবে। এ ঘটনায় আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে।’