পশ্চিমা বিশ্বের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দেশগুলো বিএনপিকে সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং আমাদের করণীয়’— শীর্ষক সেমিনার ও ‘নো কমেন্ট’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আমরা একা নই। পশ্চিমা বিশ্বের যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী…. তারা আমাদের সাহায্য করছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এই লড়াইয়ে ইতোমধ্যে আমাদের অনেক প্রাণ গেছে এবং সহস্রাধিক মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।’
বিএনপির ৪৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এতে এটাই প্রমাণ করে যে, দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য তার সমস্ত ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত। দেশের মানুষ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সংগ্রাম করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে রাস্তায় নেমে গেছি। আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ আছেন, যারা সবসময় হতাশায় ভোগেন। আমার বিশ্বাস, মাঠে থাকলে হতাশা আসে না। আমি তো দলের নেতাদের মধ্যে এবং আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ সংগ্রাম করছে তাদের মধ্যে কোনো হতাশা দেখি না। আমি বিশ্বাস করি, এই সংগ্রামে আমরা জয়লাভ করব। কারণ সত্য এবং সঠিক পথে আছি।’
‘শেখ হাসিনা চাইলেন যে, বিনা ভোটাই তিনি নির্বাচিত হবেন, সেটি তো হবে না। ২০১৪ সালে যেটা পেরেছেন, ২০১৮ সালে যেটা করতে পেরেছেন, ২০২৪ সালে সেই নির্বাচন আপনি করতে পারবেন না। কারণ মানুষ যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটি আর সম্ভব হবে না।’
‘যেভাবেই হোক এ দেশে নির্বাচন হবেই’ গতকালের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উনি তো কালকে বলে দিয়েছেন— যে যা বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। অর্থাৎ যে যাই বলুক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাই বলুক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাই বলুক, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলি, ওনার ওই সোনার হরিণ চাই। ক্ষমতায় তাকে যেতেই হবে। সংকটটা এই জায়গায়। আজকে প্রধানমন্ত্রী বেআইনিভাবে এবং রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন। তিনি এবারও একই কায়দায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।’
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন তো বিএনপিও চায়। কিন্তু সেই নির্বাচন এমন হতে হবে যে, যেখানে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।’
‘এত অসুস্থতার মধ্যে, নির্যাতনের মধ্যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এখনো নতি স্বীকার করেননি। তাই বিশ্বাস করি, আমাদের লড়াই অবশ্যই সফল হবে এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে সক্ষম হব। একইসঙ্গে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, আমাদের লড়াইকে আরও বেগবান করতে হবে। রাজপথে ফয়সালা করার জন্য নেমেছি। চূড়ান্ত বিজয় অবশ্যই অর্জন করতে সক্ষম হব।’
দুর্গাপূজার পর বৃহত্তর আন্দোলন হবে জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘হাতে খুব বেশি সময় নেই, মাত্র দুই মাস সময় আছে। দুই মাসের মধ্যে লড়াই একটা চূড়ান্ত জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। সবাই জানি যে, দুর্গাপূজার পরে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। এমন আন্দোলন হবে যেন সরকার পড়ে যেতে পারে… তাই তো?’
তিনি বলেন, ‘আমরা কি জানি সেই বৃহৎ আন্দোলনটা কী? এটা কী শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও দিল্লীর আন্দোলনের চেয়ে বড় হবে? আমাদের খুবই সূক্ষ্মভাবে তা করা দরকার। যদি মনে করেন আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থন থাকবে, তবে এখানকার ঘণ্টা আপনাকেই বাজাতে হবে। এই ঘণ্টা বাজানোর ক্ষেত্রে নেতৃত্বে যোগ্যতা ইত্যাদি অনেক কিছু বিবেচনায় আসে। এ পর্যন্ত এই নেতৃত্বে বিএনপি ওয়ান্ডারফুল। অযোগ্য হওয়ার কিছু নেই। বিজয় আমাদের অবশ্যম্ভাবী।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সেলিমা রহমান ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ অনেকে।