কুমিল্লার লালমাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফোরকান এলাহী অনুপম সেই ইমামের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। রোববার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে কুমিল্লার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুশফিকুর রহমানের মধ্যস্থতায় ইউএনও ও ইমামের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের মীমাংসা করে দেওয়া হয়।
এ সময় ভুক্তভোগী ইমাম মাওলানা আবুল বাসার, ইউএনও ফোরকান এলাহী অনুপম এবং শানে সাহাবা খতিব কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও জেলা ইমাম সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, খুব সামান্য একটা ঘটনাকে খুব বড় করে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ইউএনও এবং ইমামের মাঝে সামান্য একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। আমরা ইউএনও এবং ওই ইমাম সাহেবকে খবর দিয়ে এনেছিলাম। উভয়পক্ষের কথা শুনে মনে হয়নি বিষয়টি এত বড় ছিল। যতটুকু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল তা মিটমাট করে দেওয়া হয়েছে।
শানে সাহাবা খতিব কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি শামীম মজুমদার বলেন, গণমাধ্যমের শক্ত অবস্থানের কারণে এমন একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে। একজন ইউএনও ইমামের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান। আমরা যারা ইমাম রয়েছি আমরাই মানুষকে শেখাই যে কেউ যদি তার ভুল বুঝতে পারে এবং অনুতপ্ত হয় অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। ইমাম আবুল বাসারও লালামাইয়ের ইউএনও মহোদয়কে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ জন্য কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাই। তিনি একজন বিচক্ষণ মানুষ। পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দিতে চাই কুমিল্লার গণমাধ্যমকর্মীদের। তাদের কারণেই একজন নির্যাতিত মানুষ সঠিক বিচার পেয়েছে।
ইমামের চাকরি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইউএনওকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন জেলা প্রশাসক মহোদয়। তিনি চাকরি নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে ইমাম সাহেবকে পানিতে চুবানোর কথা স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।
তিনি আরও বলেন, আমরা আজ সকাল থেকে ওই ইমাম সাহেবকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো তাকে গুম করে ফেলা হলো, নাকি অন্য কিছু। পরে আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর তিনি হয়তো সেটি দেখেছেন। পরে আত্মগোপন থেকে বের হয়ে আসেন। বিকেলে জেলা প্রশাসক মহোদয় খবর দিলে তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) জুমার নামাজের সময় কাতার সোজা করতে ইউএনও ফোরকান এলাহী অনুপমকে গায়ে হাত দিয়ে সরিয়ে কাতার সোজা করেন লালমাই উপজেলার ভাটরা কাছারী জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল বাসার। পরে নামাজ থেকে বের হয়ে ইমাম জানতে পারেন যে তিনি লালমাই উপজেলার ইউএনও। বিষয়টি জেনে তিনি ইউএনও ফোরকান এলাহী অনুপমকে বলেন, স্যার আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। ক্ষমা করে দেন। এতে ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে রাগ ঝেড়ে বলেন, আপনি কত বড় ইমাম হয়েছেন তা এখনই বুঝবেন। আপনাকে এখন পানিতে চুবাবো। আপনার ইন্টারভিউ হবে, আপনি কীভাবে ইমাম হলেন তা জানবো ইত্যাদি বলে- উদ্ভট প্রশ্ন করতে থাকেন। ঘটনাস্থলে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার সাইফুল্লাহ সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন আপনার আর এই মসজিদে নামাজ পড়ানোর দরকার নেই। এখন থেকে এই মসজিদে আপনার চাকরি নেই।
বিষয়টি জানাজানি হলে পরদিন শনিবার (১৪ অক্টোবর) দেশের শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। এদিন সন্ধ্যায় ওই ইমামের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের কথা হলেও কিছুক্ষণ পরই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে রোববার সারা দিনও মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপনে থাকেন ইমাম মাওলানা আবুল বাসার।