মির্জা ফখরুলকে আজরাইল আসর করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুল নাকি শেখ হাসিনাকে আর সময় দেবেন না। সময় দেওয়ার তুমি কে? সময় দেওয়ার মালিক আল্লাহ তায়ালা ও এই দেশের জনগণ আর কেউ নন। ইদানীং আবার পিটার হাসের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বাইরে এসে আজরাইলের সঙ্গেও কথা কয়। আজরাইল নাকি আমাদের মাথার চারপাশে ঘুরতেছে। শেখ হাসিনার মাথার চারপাশে আজরাইল। আজরাইলের সঙ্গে কথা কন সরকার পতনের জন্য, পদযাত্রায় কাজ হয়নি, বিক্ষোভে কাজ হয়নি। গোলাপবাগের গরুর হাটেও কাজ হয়নি, পল্টনের পদযাত্রায়ও কাজ হয়নি। এখন আজরাইলের সঙ্গে কথা বলছেন। আর কাকে দেখাবেন?’
শনিবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর কাওলায় সিভিল এভিয়েশন মাঠে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গত ৭ অক্টোবর এ সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তারিখ পরিবর্তন হয়।
বিএনপির অনশন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘খবর জানেন? বিএনপির অনশনের খবর জানেন? মির্জা ফখরুল মিডিয়াকে বলেছে, অনশন; আর তিনি সকালবেলা নাশতা করে আসছেন। সকালে সোনারগাঁও থেকে খাবার এনে নাশতা করেছেন। আর এখন করছেন অনশন। বাসায় গিয়ে আবার কখন রাজখাবার খাবেন, সেই অপেক্ষায় আছেন।’
তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আর আসে না। এখন কর্মীদের কী বলবেন? এত দিন বলছেন, আমেরিকা আসতেছে। কই নিষেধাজ্ঞা? এখন তাদের (বিএনপি) আর কোনও উপায় নেই। উপায় একটা, আমেরিকা যদি নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসে কখনও। দুই সেলফিতে কাজ হইয়া গেছে। তাদের এখন ঘুম হারাম। নয়াদিল্লির সেলফি, নিউইয়র্কের সেলফি; দুই সেলফিতে ওদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ফখরুল কয় রাত নাকি ঘুমায় নাই। কী হলো? শেখ হাসিনা নাকি আমেরিকার বিরুদ্ধে! আমেরিকার প্রেসিডেন্ট শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার মেয়েকে দিল্লিতে একবার, নিউইয়র্কে একবার সেলফি তোলে কেন? এরপরও এদের লজ্জা-শরম নেই।’
ক্ষমতার জন্য শেখ হাসিনা ঘোরাঘুরি করছেন, মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, শেখ হাসিনা বিদেশে কারও কাছে ক্ষমতার জন্য ঘোরাঘুরি করতে যান না। তিনি বিদেশে যান বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশের জনগণের জন্য, অর্থনীতিকে বাঁচাতে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান প্রধানমন্ত্রীকে দাওয়াত দিয়েছেন বলেও জানান কাদের।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে বিএনপির অন্তর্জালা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা উন্নয়ন করে ওদের জ্বালা বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্তর্জালায় এরা মরে। শেখ হাসিনা থাকলে এই দেশের আরও উন্নয়ন হবে। জনগণ বিশ্বাস করে আজকের এই সংকট, বিশ্ব সংকট শেখ হাসিনা সামলাচ্ছে। জনগণ এখনও মনে করে বাংলাদশে বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনার চেয়ে সৎ নেতা, শেখ হাসিনার চেয়ে দক্ষ নেতা, শেখ হাসিনার চেয়ে পরিশ্রমী নেতা, শেখ হাসিনার চেয়ে জনপ্রিয় নেতা, শেখ হাসিনার চেয়ে জনদরদি নেতা আর একজনও আছে? শেখ হাসিনার মতো মানুষকে ভালোবাসে এমন নেতা আরেকজন আছে?
মির্জা ফখরুলকে কেউ ভালোবাসে? প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা দিন মিথ্যা কথা বলে। বেগম জিয়াকে বঙ্গবন্ধুকন্যা মানবতা দেখিয়ে বাড়িতে রেখেছেন। আইন মানতে হবে। হ্যাঁ, আপনি বিদেশ যান। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে, আপনাকে প্রথম জেলে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে আপনাকে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে। আদালত যদি আপনাকে ছুটি দেন, যদি বিদেশ যেতে দেন, সরকার কোনও বাধা দেবে না। নিয়মে আছে, আইনের মধ্যে আছে।
বিএনপি আমলের নানা ‘অপকর্ম’ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সব জঘন্য অপরাধ যারা করে, বাংলাদেশের মাটিকে তাদের ক্ষতায় ফিরে আসার কোনও অধিকার নেই। এরা অন্ধকারের জীব। এরা ভোট চুরি করে। এরা অর্থপাচার করে। ফখরুল আজকে বলে, বাংলাদেশের অথনীতি ফোকলা হয়ে গেছে। ফখরুল, তোমার বিএনপি ফোকলা হয়ে গেছে। মিথ্যা কথা বলতে বলতে ফোকলা হয়ে গেলে। আজ আইএমএফের মন্তব্য আর ফখরুলের মন্তব্য পাশাপাশি ঢাকার মিডিয়ায় আমরা দেখেছি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশ অর্থনীতিতে অগ্রসরমান দেশ। দেশের অর্থনীতি সঠিক খাতে আর ফখরুল বলে অর্থনীতি ফোকলা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধিতে সাউথ এশিয়ায় কেবল ভারতের পরের অবস্থানে আছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি প্রমুখ।