বাংলাদেশ সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চার সদস্যের একটি দল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ। বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে অর্থপাচার ও এর সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আলোচনায়। এ বিষয়ে দুদককে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। যদিও দুদক বলছে আইএমএফের সঙ্গে তাদের আলোচনা একেবারেই সৌজন্যমূলক।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আইএমএফ’র মিশন প্রধান রাহুল আনন্দর নেতৃত্বে ছিল চার সদস্যের টিম। আর দুদকের পক্ষে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন এবং মানি লন্ডারিংয়ের মহাপরিচালক মোকাম্মেলসহ চারজন উপস্থিত ছিলেন।
যদিও বৈঠক শেষে আইএমএফ’র প্রতিনিধি দলের কেউ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি। তবে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, আইএমএফ প্রতিনিধি দল এখানে এসে দুদক আইন ও বিধি অনুসারে কীভাবে কাজ করে, সেই বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। বর্তমানে দুদকের কাঠামো, পারফরম্যান্স এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী সে বিষয়ে অবহিত হয়েছেন। এছাড়া মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ দমনে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা দরকার সেটা তারা উপলব্ধি করেছেন এবং গুরুত্বারোপ করেছেন। এখানে সুনির্দিষ্ট সহায়তা চাওয়ার কোনো সুযোগ নেই, কারণ আইনই বলে দিয়েছে কী করা সম0
বাংলাদেশকে দ্বিতীয় কিস্তি ঋণ দেওয়ার আগে শর্ত পূরণ যাচাই করতে গত ৪ অক্টোবর দেশে আসে আইএমএফ এর দলটি। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইএমএফ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে কিছু শর্ত দেয়। সেই সঙ্গে দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথাও বলে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশে আসা আইএমএফ’র দলটি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত কতটা পূরণ হয়েছে এবং সরকারি বিভাগগুলো শর্ত পূরণে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে তা দিয়ে আলোচনা হয়।
আগামী নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে ৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্টাফ মিশন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে করেছে। বৈঠকে তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব আয় এই চারটি বিষয় উত্থাপন করেছে।
পরের দিন ৫ অক্টোবর এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করেছে তারা। ওই বৈঠকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি কমানো, আমদানি পর্যায়ের শুল্কহার ধীরে ধীরে কমানো ও করের আওতা বৃদ্ধির পরামর্শ ছিল আইএমএফের। সংস্থাটি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অটোমেশনে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
এনবিআর সূত্র জানায়, আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলেছে। পরের দুই বছরে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলেছে। এই তিন অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়াতে হলে এনবিআরকে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা এনবিআরের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।