এফবিসিসিআই সভাপতি বলেছেন, পাট আমাদের সোনালি ঐতিহ্য। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের নিজস্বতা ও গৌরবের ইতিহাস। পাটের সোনালি আঁশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। পাট শিল্পের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করে এই শিল্পের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনতে এই খাতের উদ্যোক্তা, সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে এফবিসিসিআই।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টায় এফবিসিসিআইয়ের গুলশান কার্যালয়ে পাট শিল্প খাতের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আমাদের পাট শিল্প ছিল অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। একসময় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান হাতিয়ার ছিল এই পাট। এমনকি স্বাধীনতার পরেও দু’এক বছর আমাদের পাট শিল্পের গৌরব ছিল অক্ষত। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সেই পাট শিল্পের গৌরব আজ নানাবিধ কারণে ম্লান হতে বসেছে। এই শিল্পের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
মাহবুবুল আলম বলেন, পাটের সোনালি আঁশ কাজে লাগিয়ে কীভাবে রফতানি বৃদ্ধি করা যায়, কীভাবে পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়, সেটি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। পাটজাত পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে বিশ্বের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি ও রফতানি বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা দেবে এফবিসিসিআই।
মতবিনিময় সভায় পাটজাত শিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন ও খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা পাট শিল্পের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবগুলো হলো- কাঁচা পাটের উপর ২ শতাংশ উৎসে কর রহিতকরণ, পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ শতভাগ বাস্তবায়ন ও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধকরণ, অ্যান্টি ডাম্পিং নিয়ে আপিল করা, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পাটজাত পণ্যকে কৃষিজাতপণ্য হিসাবে ঘোষণা বাস্তবায়ন, পাট শিল্পকে রক্ষার জন্য ইডিএফের (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) ন্যায় জেএসডিএফের (জুট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) গঠন এবং পাটকলগুলোর মেশিনারিজের আধুনিকায়নের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ন্যায় ৩০ শতাংশ ভর্তুকি ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা।
এছাড়া অন্য প্রস্তাবগুলো হলো- করোনাকালীন শিল্প সেক্টরে সরকার প্রদত্ত প্রণোদনা বেসরকারি পাটকলগুলো না পাওয়ায় তার পরিবর্তে ব্যাংক সুদ মওকুফ করা, সকল পাটপণ্য রফতানিতে ৭ শতাংশ, ১২ শতাংশ এবং ২০ শতাংশ প্রণোদনার পরিবর্তে ইয়ার্ন ও টোয়াইন এবং হেসিয়ান, সেকিং ও সিবিসি এর জন্য ২০ শতাংশ ও বহুমুখী পাট পণ্যের জন্য ২৫ শতাংশ হিসেবে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি, রফতানির বিপরীতে প্রণোদনার উপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর রহিতকরণ, অন্যান্য শিল্পখাতের ন্যায় পাট শিল্পখাতের সমুদয় ব্যাংক ঋণ মওকুফ, কৃষকদের জন্য উচ্চ ফলনশীল পাট বীজ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং কাঁচা পাট উৎপাদন, ব্যবহার ও রফতানি বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যান প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সভায় পাট শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, কাঁচা পাটের উপর ২ শতাংশ উৎসে কর আরোপ করায় সেটি বাংলাদেশের কৃষক ও কাঁচা পাট ব্যবসায়ীদের উপর পড়েছে, ফলে কৃষকগণ পাট উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হওয়ার পাশাপাশি পাট উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এ সময় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০ এর শতভাগ বাস্তবায়ন ও পলিথিনের ব্যবহার নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বাংলাদেশ পাটকল সমিতি) প্রেসিডেন্ট ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. আবুল হোসেন বলেন, পাট শিল্পকে রক্ষায় ইডিএফের (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) এর ন্যায় জেএসডিএফ (জুট সেক্টর ডেভেলপমেন্ট ফান্ড) গঠন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাট শিল্পে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা হলে মিল মালিকগণ চিরাচরিত পাটপণ্যের সাথে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ হবে এবং স্বল্প মূল্যে দেশে ও বিদেশের বাজারে পাটপণ্য এবং বহুমুখী পাটপণ্য বিক্রি/রফতানি বাড়াতে সচেষ্ট হবে।
সভায় অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান পরিচালক মো. হাবিব উল্লাহ ডন, পরিচালক আলহাজ্ব আজিজুল হক, মো. নিয়াজ আলী চিশতি, ফখরুস সালেহীন নাহিয়ানসহ বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জুট স্পীনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ডাইভারসিফাইড জুট গুডস প্রডিউসারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনএসডিএ) এবং বাংলাদেশ হস্তশিল্প প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বাংলাক্রাফ্ট) নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।