দেশে ঘরে বসে অনলাইনে পণ্য অর্ডার দেয়া-নেয়া বেড়েছে। এ সুযোগে কর্মসংস্থান হয়েছে লাখো মানুষের। এ ক্ষেত্রে তরুণ-তরুণীরা যেমন চাকরি পাচ্ছেন, তেমনি ট্রান্সজেন্ডারদেরও হচ্ছে কর্মসংস্থান। উদ্যোক্তা ও ক্রেতারা বলছেন, এই ঈদে কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। আগামীতে আরও তিন লাখ কর্মসংস্থান হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
এ সংক্রান্ত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন নিত্যপণ্যের অর্ডার বেশি পাচ্ছেন তারা। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে পোশাকের অর্ডারও বেড়ে গেছে। অপরদিকে খাবারের অর্ডারও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। রমজানে শুরু হয়েছে ইফতারি ও সাহরির অর্ডার।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের যুবক রাসেল আহমদের সঙ্গে কথা হয়। আগে তিনি মোহাম্মদপুরে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতেন। গত বছর লকডাউনের পর চাকরি হারান তিনি। এরপর একটি বহুজাতিক কোম্পানির খাদ্য ডেলিভারির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যান। কিন্তু ওই কোম্পানির কর্মকর্তারা তাকে ভালো একটি স্মার্টফোন ও মোটরসাইকেল থাকতে হবে বলে শর্ত দেন। কিন্তু পরে তিনি ফুড পান্ডায় যোগাযোগ করেন। সেখানে তিনি স্মার্টফোন ও বাইসাইকেল কিনে চাকরি করছেন। ডেলিভারি হিসেবে টাকা পান তিনি। এরকম অনেক বেকার এখন ডেলিভারির কাজ করছেন।
এদিকে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে টিসিবির নতুন আরও চারটি পণ্য- তেল, ছোলা, ডাল ও চিনি অনলাইনে বিক্রি চলছে। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তত্ত্বাবধানে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
ই-ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, দিন দিন ই-সেবার চাহিদা বাড়ছে। গত এক বছরে ৭৫ হাজার থেকে এক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কারণ কিছু প্রতিষ্ঠান বড় হয়েছে। আবার নতুন প্রতিষ্ঠানও এসেছে। তারা সবাই নতুন লোক নিচ্ছে। তাই কিছু ডাটা এনালাইসিস করে আমরা দেখেছি এই গ্রোথ রাখতে পারলে আগামী তিন বছরে পাঁচ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার শুভনও একই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গতকাল ই-ক্যাবের মাধ্যমে তিনটি প্রতিষ্ঠান টিসিবির পণ্য পেয়েছে। পণ্যগুলো প্যাকেট করে মঙ্গলবার থেকে অনলাইনে আপলোড হয়েছে। চাল ডাল, ওয়ান স্টপ আর স্বপ্ন সুপারশপ টিসিবির পণ্যগুলো বিক্রি করছে। চালডাল ডটকমে ঘণ্টায় ১ হাজার অর্ডার হচ্ছে। স্বপ্নে ঘণ্টায় ৩০০ আর ওয়ানস্টপে ১০০টি করে অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে।
চাহিদা অনেক থাকায় ‘পাঠাও ফুড’র ডেলিভারিম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৫০ ট্রান্সজেন্ডারকে। প্রায় এক মাস আগে তাদের নিয়োগ দেয়া হয়। পাঠাও ফুডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন তাদের কাজে সবাই খুশি। তবে দারাজের হেড অব কমিউনিকেশন সায়ন্তনী তিসা বলেন, চাল, ডাল, গ্রোসারির নিত্যপণ্যের মতো দারাজের পণ্যগুলোর অর্ডার তুলনামূলকভাবে বাড়েনি। তবে আমাদেরও ডেলিভারি ম্যানের চাহিদা বেড়ে গেছে। লকডাউনের কারণে অর্ডারও আগের চেয়ে বেশি পাচ্ছি।
অন্যদিকে কুরিয়ার সেবা বলতে এক সময় মানুষ বুঝতো শুধুই চিঠিপত্র বা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আদান-প্রদান। গত এক দশকে সেই ধারণা পুরোপুরি বদলে গেছে। ই-কমার্সে কেনাকাটা বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য পরিবহনে গুরুত্ব বেড়েছে কুরিয়ারের। ডিজিটালাইজেশন তথা স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, অ্যাপভিত্তিক কেনাবেচায় গত ছয় বছরে বাজারে এসেছে শতাধিক অনলাইন বা অ্যাপভিত্তিক ই-কুরিয়ার কোম্পানি।
ই-কুরিয়ার সার্ভিস ডেলেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও রফিকুল রঞ্জু বলেন, করোনাকালে আমাদের ডেলিভারি বেড়েছে। আমাদের ডেলিভারি পারসন বাড়াতে হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ই-ক্যাব বিগত বছর বিভিন্ন সময়ে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এসবের সফলতা শুধু ই-কমার্স সেক্টরকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে তা নয়, বরং দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমরা এসব কাজে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি।