ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন ও গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে। দুই পক্ষের ২৩০০ এর বেশি মানুষ এতে প্রাণ হারিয়েছেন।
এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, গাজায় ভয়াবহ অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। এমন অবস্থার মধ্যে অভিযানে প্রত্যেক হামাস সদস্যের ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাদের সব সদস্যকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ইসরায়েল এরই মধ্যে জরুরি সরকার গঠন করেছে। সেই সরকারের প্রথম বৈঠকের পর নেতানিয়াহু এমন মন্তব্য করেন। এছাড়া ইসরায়েলের বিরোধী নেতা বেনি গ্যান্টজ বলেছিলেন যে এটি ‘যুদ্ধের সময়’।
বুধবার হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মাঝে জাতীয় সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছে ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধীরা। কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও বিরোধীদলীয় নেতা বেনি গান্তেজ জাতীয় সরকার গঠনে রাজি হন। পরে সন্ধ্যার দিকে দেওয়া এক ভাষণে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যেক হামাস সদস্যকে মৃত দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রত্যেক হামাস সদস্যই (আমার চোখে) মৃত ব্যক্তি বা ডেড ম্যান।’ সাধারণত পশ্চিমা বিশ্বে প্রাচীন আমলে প্রতিপক্ষকে হত্যা করার হুমকি দিতে এই ডেড ম্যান শব্দবন্ধটি ব্যবহার করা হতো।
ইসরায়েলে মৃতের সংখ্যা ১২০০ ছুঁয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
জরুরি সরকার গঠনের মানে হল, যুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এ ধরনের কোনো বিল বা সরকারি সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে পাস হবে না। পাশাপাশি যুদ্ধকালীন সময়ে সমস্ত সিনিয়র কর্তৃপক্ষ নিয়োগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়ানো হবে।
গত ৭ অক্টোবর সকালে ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলের দিকে ৫ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। একই সঙ্গে স্থলপথ, জলপথ ও আকাশপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েন হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েলও এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ ঘোষণা করে হামাসের বিরুদ্ধে।
সাধারণত যুদ্ধ শুরু হলে সামরিক অবস্থানে হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। তবে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় সেসবের কিছুই মানছে না ইসরায়েল। তারা যেন একেবারে সব শেষ করে দিতে হামলা করছে। বেশিরভাগ মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুলও বাদ যাচ্ছে না।
এদিকে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে গাজার জরুরি ও সামান্য বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছিল। এখন গাজা পুরোপুরি বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এর ফলে সেখানে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার পর গাজায় সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। এর ফলে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে কোনো প্রকার জরুরি পণ্য সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
গাজা কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, ‘এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতি গাজা উপত্যকার সমস্ত বাসিন্দাদের জন্য একটি মানবিক সংকট তৈরি করেছে।’
এদিকে গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাই আল-কাইলা বলেছেন যে, ‘গাজার হাসপাতালগুলোতে জেনারেটর চালানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই। যা আছে সেটি বৃহস্পতিবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এর ফলে হাসপাতালের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি আরও বাড়বে।’
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫০। এছাড়া আরও পাঁচ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২০০-এ পৌঁছেছে।
অপরদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুতির ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সংস্থা বলছে, গাজার অগণিত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। দুই লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৪ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়েছে।